ইনি ছিলেন সাহসী মহিলা, যাঁর নামে ব্রিটিশরা কাঁপত
ব্রেকিং বাংলা লাইফস্টাইল ডেস্ক, ১৯ নভেম্বর : উদা দেবী এবং তাঁর স্বামী মক্কা পাসি, দুজনেই নবাব ওয়াজিদ আলী শাহের সেনাবাহিনীতে নিযুক্ত ছিলেন। উদা দেবীর দায়িত্ব ছিল বেগম হযরত মহলকে রক্ষা করা। ১৮৫৭ সালের যুদ্ধ শুরু হয়েছিল। দেশে স্বাধীনতার শিখা জেগে উঠেছিল। এদিকে ব্রিটিশরা নবাব ওয়াজিদ আলী শাহকে নির্বাসিত জীবন যাপনের জন্য আওধ থেকে কলকাতায় পাঠায়। তখন বেগম হযরত মহল স্বাধীনতার শিখা নিভতে দেননি। তিনি নিজেই সেনাবাহিনীর নেতৃত্ব দিতে শুরু করেন।
স্বামীর মৃত্যুর প্রতিশোধ:
উদা দেবী এবং তার স্বামী মক্কা পাসি, দুজনেই নবাব ওয়াজিদ আলী শাহের সেনাবাহিনীতে নিযুক্ত ছিলেন। উদা দেবীর দায়িত্ব ছিল বেগম হযরত মহলকে রক্ষা করা। ১৮৫৭ সালের যুদ্ধ শুরু হয়েছিল। দেশে স্বাধীনতার শিখা জেগে উঠেছিল। এদিকে ব্রিটিশরা নবাব ওয়াজিদ আলী শাহকে নির্বাসিত জীবন যাপনের জন্য আওধ থেকে কলকাতায় পাঠায়। তখন বেগম হযরত মহল স্বাধীনতার শিখা নিভতে দেননি। তিনি নিজেই সেনাবাহিনীর নেতৃত্ব দিতে শুরু করেন।
তাঁর নির্দেশে চিনহাটে ইংরেজ বাহিনী ও নবাবী বাহিনীর মধ্যে তুমুল সংঘর্ষ হয়। এতে উভয় পক্ষের বহু সেনা নিহত হয়। এই যুদ্ধে বেগম হযরত মহলের নিরাপত্তায় নিয়োজিত উদা দেবীর স্বামী মক্কা পাসিও শহীদ হন। তখন উদা দেবীর সামরিক রূপ জেগে ওঠে। তিনি তার স্বামীর মৃত্যুর জন্য ব্রিটিশদের কাছ থেকে প্রতিশোধ নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। নবাব ওয়াজিদ আলি শাহকে কলকাতায় পাঠানোয় তিনি ইতিমধ্যেই অসন্তুষ্ট ছিলেন। এবার তিনি অন্য কারণ খুঁজে পেলেন।
১৬ নভেম্বরের বিদ্রোহ:
স্বামীর মৃত্যুর পর শোকে বসে থাকেননি তিনি। বরং তার মধ্যে একটা শিখা জেগে উঠল। যেহেতু তিনিও অস্ত্র ব্যবহারের প্রশিক্ষণ নিয়েছিলেন। তিনি বন্দুক তুলে সিকান্দারবাগে পৌঁছে যান। এখানে আগে থেকেই বিপুল সংখ্যক ভারতীয় সেনা উপস্থিত ছিল। ব্রিটিশরা এ খবর পেয়ে সিকান্দারবাগ আক্রমণের প্রস্তুতি নিয়ে আসে। ব্রিটিশরা কিছু করার আগেই তিনি সিকান্দারবাগে উপস্থিত পিপল গাছে আরোহণ করেন।
তিনি পুরুষদের ইউনিফর্ম পরেছিলেন। দিনটি ছিল ১৮৫৭ সালের ১৬ নভেম্বর। পিপল গাছ থেকেই তিনি নির্দিষ্ট ব্যবধানে ৩৬ জন ব্রিটিশ সৈন্যকে গুলি করে গুলি করেন। বৃটিশ অফিসাররা এই ঘটনা জানতে পেরে হতবাক হয়ে যায়। কী ভাবে এবং কোথা থেকে এই হামলা হয়েছে তা কেউ জানতে পারেনি। বিক্ষুব্ধ ব্রিটিশরা সিকান্দারবাগে আশ্রয় নেওয়া ভারতীয় যোদ্ধাদের উপর আক্রমণ করে এবং তাদের বিপুল সংখ্যক গণহত্যা করে। এটি ১৬ নভেম্বরের বিদ্রোহ হিসাবে স্মরণ করা হয়।
ঘটনাস্থলে পৌঁছে ক্যাপ্টেন ভায়োলাস এবং ডাওসন বুঝতে পারেননা কীভাবে তাদের সৈন্যরা মারা যায়। তাদের লক্ষ্য করে গুলি কোথা থেকে ছুড়েছে? একজন ইংরেজের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছিল একটি পিপল গাছের দিকে যেখানে লাল ইউনিফর্ম পরা এক সৈন্য বসে গুলি চালাচ্ছিল। তখন তারা বোঝে কীভাবে ৩৬ জন ব্রিটিশ সেনা মারা যায়। ব্রিটিশরা সময় নষ্ট না করে ওই সৈনিককে টার্গেট করে।
গুলি লাগার সঙ্গে সঙ্গেই নিচে পড়ে যান ওই যুবক। তিনি উদা দেবী ছাড়া আর কেউ নন, পরে তদন্তে জানা যায় যে তিনি একজন পুরুষ নন বরং একজন মহিলা ছিলেন, যিনি ব্রিটিশদের কাছ থেকে প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য পুরুষ ছদ্মবেশ ধারণ করেছিলেন।
সেই থেকে বীর নারী উদা দেবীকে দেশের স্বাধীনতার একজন শহীদ ও সৈনিক হিসেবে স্মরণ করা হচ্ছে। আজও লখনউতে তাঁর নাম অত্যন্ত সম্মানের সাথে নেওয়া হয়। একই সিকান্দারবাগ মোড়ে উদা দেবীর মূর্তি স্থাপন করা হয়েছে। প্রতি বছর তার জন্মবার্ষিকী ও মৃত্যুবার্ষিকীতেও সেখানে অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
No comments:
Post a Comment