নিম করোলি বাবার অলৌকিক কাহিনী
মৃদুলা রায় চৌধুরী, ২৪ মে : নিম করোলি বাবাকে এই যুগের সর্বশ্রেষ্ঠ সাধু বলে মনে করা হয়। বাবার আসল নাম লক্ষ্মীনারায়ণ শর্মা। নিম করোলি বাবা হনুমাননের প্রবল ভক্ত ছিলেন কিন্তু তাঁর ভক্তরা তাঁকে হনুমানের অবতার বলে মনে করতেন।
নিম করোলি বাবার জীবন সম্পর্কিত অনেক অলৌকিক গল্প শোনা যায়, যার জন্য বাবা দেশে এবং বিদেশে খুব বিখ্যাত। শুধু তাই নয়, বাবার অলৌকিক কাহিনী নিয়ে একটি বইও লেখা হয়েছে, যার নাম 'মিরাকল অফ লাভ'। এই বইয়ে বাবার অলৌকিক ঘটনার অনেক গল্প বলা হয়েছে। বাবার 'বুলেটপ্রুফ কম্বল' সম্পর্কিত একটি ঘটনাও এই বইতে উল্লেখ করা হয়েছে।
নিম করোলি বাবার বুলেটপ্রুফ কম্বলের গল্প চলুন জেনে নেই-
নিম করোলি বাবা সবসময় নিজেকে কম্বলে ঢেকে রাখতেন। রিচার্ড অ্যালপার্ট যিনি পড়ে রামদাস নামে পরিচিত হন, তার 'মিরাকল অফ লাভ' বইতে বুলেটপ্রুফ কম্বল সংক্রান্ত ঘটনা উল্লেখ করেছেন। রিচার্ড অ্যালপার্ট বলেন, বাবার অনেক ভক্তের মধ্যে একজন বয়স্ক দম্পতিও ছিলেন যারা ফতেহগড়ে থাকতেন। বাবার অলৌকিক কম্বলের এই ঘটনাটি ১৯৪৩ সালের সাথে সম্পর্কিত।
একদিন বাবা হঠাৎ বৃদ্ধ দম্পতির বাড়িতে যান। এর পর বাবা বললেন রাতে এখানেই থাকবেন। বাবার কথা শুনে ভক্ত বৃদ্ধ দম্পতি খুব খুশি হলেন। কিন্তু বয়স্ক দম্পতি দরিদ্র ছিল এবং তারা ভাবতে শুরু করে যে বাবা যদি থেকে যান তবে তাকে কী দিয়ে আতিথেয়তা ও সেবা করবেন। তাদের কাছে তো তেমন কিছু নেই। সেই সময়ে দম্পতির কাছে যা কিছু ছিল, তারা তা বাবাকে দিয়েছিলেন এবং তাঁকে অভিনন্দন জানিয়েছিলেন। খাওয়ার পরে, ওই দম্পতি বাবাকে ঘুমনোর জন্য একটি খাট এবং ঢেকে রাখার জন্য একটি কম্বল দেন, যার উপর বাবা ঘুমিয়ে পড়লেন।
এরপর বৃদ্ধ দম্পতিও বাবার খাটের কাছে ঘুমিয়ে পড়েন। বাবা কম্বল ঢেকে ঘুমচ্ছিলেন আর এমনভাবে আর্তনাদ করছিলেন যে যেন কেউ তাকে মেরে ফেলছে। দম্পতি ভাবতে লাগলেন বাবার কি হল? কোনোরকমে রাত কেটে ভোর হল। বাবা সকালে একটি চাদর মুড়ে বয়স্ক দম্পতিকে দিয়েছিলেন এবং তাদের বলেছিলেন গঙ্গায় প্রবাহিত করতে। কিন্তু এটি খুলতে এবং দেখতে না করেন তিনি, নইলে তাঁরা সমস্যায় পড়তে পারেন বলেন বাবা। বাবাও বললেন, চিন্তা করো না, তোমার ছেলে এক মাসের মধ্যে ফিরে আসবে। দম্পতিও বাবার কথায় গঙ্গায় ভাসাতে চাদর নিয়ে যাচ্ছিলেন।
চাদরটি বহন করার সময় দম্পতির মনে হলো চাদরটিতে লোহার মতো কিছু আছে। কিন্তু বাবা খালি চাদর দিয়েছিলেন। বাবা চাদর খুলতে নিষেধ করেছিলেন। তাই না খুলেই নদীতে ভাসিয়ে দেন ওই বৃদ্ধ দম্পতি। বাবার কথায়, এক মাস পর বৃদ্ধ দম্পতির ছেলেও বার্মা ফ্রন্ট থেকে বাড়ি ফেরে। এই দম্পতির একমাত্র ছেলে, যিনি ব্রিটিশ সেনাবাহিনীতে একজন সৈনিক ছিলেন এবং দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় বার্মা ফ্রন্টে ছিলেন। বাড়িতে ছেলেকে দেখে বৃদ্ধ দম্পতির খুশির সীমা ছিল না। কিন্তু এরপর তাঁদের ছেলে বাবা-মাকে এমন একটি ঘটনার কথা বলে, যা শুনে তারা অবাক হয়ে যান।
ছেলে বলেন, প্রায় এক মাস আগে একদিন তাকে শত্রুবাহিনী ঘেরাও করে সারা রাত ধরে গুলি চালায়। এই যুদ্ধে তার সমস্ত সঙ্গীও নিহত হয় কিন্তু তিনি একাই বেঁচে যান। ছেলে বলে যে সে নিজেও জানে না কীভাবে সে বেঁচে যায়। তিনি বলেন, তার ওপর অনেক গুলি চালানো হয়েছে কিন্তু তাঁর একটিও গুলি লাগেনি।
আসলে সেই রাতেই নিম করোলি বাবা এসে বৃদ্ধ দম্পতির বাড়িতে থাকেন। ছেলে নিরাপদে বাড়ি ফিরেছে দেখে বৃদ্ধ দম্পতির চোখ জলে ভরে যায়। সেই সঙ্গে বাবার অলৌকিক ঘটনাও বুঝলেন এই দম্পতি। এই কারণেই রিচার্ড অ্যালপার্ট তার 'মিরাকল অফ লাভ' বইতে এই কম্বলটিকে বুলেটপ্রুফ কম্বল বলেছেন। আজও, বাবার ভক্তরা নিম করোলি বাবার আশ্রম কাইঞ্চি ধাম এ অবস্থিত মন্দিরে কম্বল প্রদান করেন। বাবা নিজেকে সবসময় কম্বল ঢেকে রাখতেন।
No comments:
Post a Comment