আগামীকাল কার্গিল বিজয় দিবস। প্রতি বছর ২৬ জুলাই 'বিজয় দিবস' হিসেবে পালিত হয় কার্গিল যুদ্ধে জীবন উৎসর্গকারী সেই সৈন্যদের সম্মান জানাতে। এই দিনটিকে 'অপারেশন বিজয়'-এর সাফল্যের প্রতীক হিসেবে বলা হয়।
ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে ১৯৯৯ সালে হওয়া এই যুদ্ধ 'অপারেশন বিজয়'-এর মাধ্যমে, দেশের সাহসী সৈন্যরা কার্গিলে পাকিস্তানিসৈন্য দের যোগ্য জবাব দেয়।
সেই সৈনিকদের জন্য দেশ আজ সুস্থ, তাঁরা কারা চলুন জেনে নেই
ক্যাপ্টেন বিক্রম বাত্রা:
এই যুদ্ধে ক্যাপ্টেন বিক্রম বাত্রার নাম চির স্মরণীয়। তিনি ১৯৭৪ সালে হিমাচল প্রদেশের পালামপুরে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৯৬ সালের জুন মাসে তিনি মানেকশ ব্যাটালিয়নে IMA-তে যোগদান করেন। কিছু প্রশিক্ষণ এবং কোর্স শেষ করার পর তার ব্যাটালিয়ন, ১৩JAK RIF উত্তর প্রদেশে চলে যান। ৫ জুন ব্যাটালিয়নের আদেশে জম্মু ও কাশ্মীরের এই যুদ্ধে যোগ দেন। তাঁকে মরণোত্তর পরম বীর চক্রে ভূষিত করা হয়।
লেঃ মনোজ কুমার পান্ডে:
কার্গিল যুদ্ধের নায়ক লেফটেন্যান্ট মনোজ কুমার পান্ডের নাম গর্বের সাথে নেওয়া হয়। তিনি ১৯৭৫ সালের ২৫ জুন ইউপির সীতাপুরে জন্মগ্রহণ করেন। মনোজ কুমার পান্ডে ছিলেন ১/১১ গোর্খা রাইফেলসের সৈনিক। দেশের জন্য নিজের জীবন উৎসর্গ করেছিলেন। তার দলকে শত্রু সৈন্যদের ছত্রভঙ্গ করার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। তিনি মরণোত্তর পরম বীর চক্রে ভূষিত হন।
সুবেদার যোগেন্দ্র সিং যাদব:
নায়েব সুবেদার যোগেন্দ্র সিং যাদব ঘটক প্লাটুনের অংশ ছিলেন এবং তাকে টাইগার হিলের প্রায় ১৬৫০০ ফুট উঁচু একটি চূড়ায় অবস্থিত তিনটি বাঙ্কার দখল করার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। তার ব্যাটালিয়ন ১২ জুন টোলোলিং টপ দখল করে। বেশ কয়েকটি গুলিবিদ্ধ হয়েও তিনি তার মিশন চালিয়ে যান। তিনি ইউপির বুলন্দশহরে জন্মগ্রহণ করেন। যোগেন্দ্র সিং যাদব দেশের সর্বোচ্চ সামরিক অলঙ্করণ পরম বীর চক্রে ভূষিত হন।
সুলতান সিং নারওয়ারিয়া:
সুলতান সিং নারওয়ারিয়া ১৯৬০ সালে মধ্যপ্রদেশের ভিন্দে জন্মগ্রহণ করেন। যখন কার্গিল যুদ্ধ শুরু হয়, তখন তিনি ছুটিতে বাড়িতে এসেছিলেন এবং এই খবর পেয়েই তিনি চলে যান। তিনি অপারেশন বিজয়ের অংশ ছিলেন। তার সৈন্যদলকে দ্রাস সেক্টরে তলোলিং পাহাড়ে নির্মিত পোস্টটি মুক্ত করার দায়িত্ব দেওয়া হয় যা পাকবাহিনীর দখলে ছিল। শত্রুর গুলিতে আহত হয়েও তিনি চূড়ায় উঠে তেরঙ্গা তুলেছিলেন। পরে বহু সৈন্যসহ তিনি শহীদ হন। তিনি মরণোত্তর বীর চক্রে ভূষিত হন।
ল্যান্স নায়েক দীনেশ সিং ভাদৌরিয়া:
ল্যান্স নায়েক দীনেশ সিং ভাদৌরিয়াও কার্গিল যুদ্ধের অংশ ছিলেন এবং শত্রুদের বিতাড়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন। যুদ্ধের সময় তিনি তার জীবনও উৎসর্গ করেছিলেন। তার জন্মও মধ্যপ্রদেশের ভিন্দে। ভাদৌরিয়া তার বীরত্বের জন্য মরণোত্তর বীর চক্রে ভূষিত হন।
মেজর এম. সারাভানন:
বিহার রেজিমেন্ট ১ম ব্যাটালিয়নের মেজর এম. সারাভানন, যিনি কার্গিল যুদ্ধে সম্মুখ সারিতে ছিলেন এবং তার বাহিনীতে থাকা নায়েক গণেশ প্রসাদ যাদব, সিপাহী প্রমোদ কুমার সহ আরও অনেক সৈনিক। বিহার রেজিমেন্টের এই সৈন্যদের জুব্বার পাহাড় দখলের দায়িত্ব দেওয়া হয়। ২১ মে, মেজর এম সারাভানান তার দল নিয়ে একটি মিশনে রওনা হন। ১৪ হাজার ফুটের বেশি উচ্চতায় বসা শত্রুরা গুলি চালাতে থাকে। সৈন্যরা জুব্বার পাহাড় জয় করে বিহার রেজিমেন্টের বীরত্বের পতাকা উত্তোলন করেছিলেন।
মেজর রাজেশ সিং:
মেজর রাজেশ সিং অধিকারীও কার্গিল যুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন। ১৮ গ্রেনেডিয়ারের সৈনিক রাজেশ সিং ১৯৭০ সালে উত্তরাখণ্ডের নৈনিতালে জন্মগ্রহণ করেন। তাকে তোলোলিং পাহাড় দখলের দায়িত্ব দেওয়া হয়। মিশনের সময় অনেক শত্রু বধ করেন। তিনি মরণোত্তর মহা বীর চক্রে ভূষিত হন।
শহীদ ল্যান্স নায়েক করণ সিং:
কার্গিলে দু মাসেরও বেশি সময় ধরে চলা যুদ্ধে ল্যান্স নায়েক করণ সিংও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন। তিনি সেনাবাহিনীর রাজপুত রেজিমেন্টে ছিলেন। যুদ্ধে লড়াইয়ে তিনি শহীদ হন। তিনি মধ্যপ্রদেশের ভিন্দে জন্মগ্রহণ করেন। শহীদ ল্যান্স নায়েক করণ সিংকেও মরণোত্তর বীর চক্রে ভূষিত করা হয়।
রাইফেলম্যান সঞ্জয় কুমার:
রাইফেলম্যান সঞ্জয় কুমারও কার্গিল যুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন। তাকে স্বেচ্ছায় মুশকোহ উপত্যকার পয়েন্ট ৪৮৭৫ এর সমতল শীর্ষ দখল করার জন্য নিযুক্ত করা হয়েছিল। তিনি যখন তার মিশনে ছিলেন, তখন শত্রুরা স্বয়ংক্রিয় বন্দুক দিয়ে গুলি চালাতে শুরু করে। অদম্য সাহস দেখিয়ে তিনি তিন অনুপ্রবেশকারীকে বধ করেছিলেন। তিনি তার সতীর্থদের অনুপ্রাণিত করেছিলেন এবং ফ্ল্যাট টপ এলাকায় আক্রমণ করেছিলেন। তিনি ১৯৭৬ সালের মার্চ মাসে হিমাচল প্রদেশে জন্মগ্রহণ করেন। পরম বীর চক্রে ভূষিত হন।
মেজর বিবেক গুপ্ত:
মেজর বিবেক গুপ্তও টলোলিং টপে শত্রুদের তাড়িয়ে দিতে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। অনেক গুলিবিদ্ধ হয়েও তিনি তার মিশন চালিয়ে যান। ক্ষত-বিক্ষত হয়েও শীর্ষ দখল করেছিলেন। তাঁকেও মরণোত্তর দেশের সামরিক সম্মান মহা বীর চক্রে ভূষিত করা হয়।
No comments:
Post a Comment