সন্দেশখালিতে বিজেপি-ইডির হাত, বিধানসভায় কী বললেন মুখ্যমন্ত্রী?
নিজস্ব সংবাদদাতা, কলকাতা, ১৫ ফেব্রুয়ারী : উত্তর ২৪ পরগণা জেলার সন্দেশখালিতে হৈচৈ-এর মধ্যে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিধানসভায় বলেছিলেন যে সন্দেশখালিতে আরএসএসের বাড়ি রয়েছে। তৃণমূল নেতা শাহজাহান শেখকে নিয়েও মুখ খোলেন তিনি। তিনি বলেন, সন্দেশখালীতে তোলপাড়ের পেছনে রয়েছে ইডি। তারাই শাহজাহানকে টার্গেট করে সন্দেশখালীতে ঢুকে তোলপাড় সৃষ্টি করে। তিনি জানান, সন্দেশখালীতে এ পর্যন্ত ১৭ জনকে আটক করা হয়েছে। সন্দেশকালীতে দাঙ্গা সৃষ্টির চেষ্টা করেছে বিজেপি। অন্যদিকে সন্দেশখালীর পরিস্থিতি উদ্বেগজনক বলে অভিহিত করেছে জাতীয় মহিলা কমিশন। অন্যদিকে, বিরোধীদলীয় নেতা শুভেন্দু অধিকারী চার বিধায়ককে নিয়ে সন্দেশখালি যাচ্ছিলেন, কিন্তু পুলিশ তাদের সন্দেশখালি যেতে বাধা দেয়। এ নিয়ে পুলিশের সঙ্গে তার বাকবিতণ্ডা হয়।
বৃহস্পতিবার বিধানসভায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “শাহজাহানকে ‘টার্গেট’ করে সন্দেশখালিতে ঢুকেছে ইডি। সেখানে অশান্তি সৃষ্টি করে সংখ্যালঘু ও আদিবাসীদের মধ্যে ঝামেলা তৈরি করা হচ্ছে। সেখানে আরএসএসের বাড়ি আছে। তাঁর কথায়, “মুখে মুখোশ লাগিয়ে তারা সেখানে তোলপাড় করছে। "সন্দেশখালীতে বহিরাগতরা এত হট্টগোল করছে।"
৫ জানুয়ারি সন্দেশখালিতে শাহজাহানের বাড়িতে তল্লাশি চালাতে এসেছিল ইডি। রেশন দুর্নীতির তদন্তে শাহজাহানের নাম উঠেছিল। কিন্তু সেদিন শাহজাহানের বাসায় ঢুকতে পারেনি কেন্দ্রীয় সংস্থা। এর বিনিময়ে তার সমর্থকদের হাতে মার খেতে হয়েছে ইডি আধিকারিকদের। পরে ইডি আদালতে জানায়, শাহজাহান ওই দিন বাড়িতেই ছিলেন। তিনি ভিতর থেকে ডেকে বাইরে লোকজন জড়ো করলেন। এর পর সে পেছনের দরজা দিয়ে পালিয়ে যায়।
এরপর থেকে নিখোঁজ শাহজাহান। পুলিশ বা ইডি কেউই তাকে খুঁজে পাচ্ছে না। বহুবার তাঁকে সল্টলেকের ইডি অফিসে ডাকা হয়েছিল। তিনি প্রতিবার উপস্থিতি এড়াতেন। এরপর আদালতে তার আইনজীবীর মাধ্যমে আগাম জামিনের আবেদন করেন শাহজাহান। তিনি বলেন, ইডি তাকে গ্রেফতার না করলে তিনি হাজির হতে প্রস্তুত।
গত কয়েকদিন ধরে সন্দেশখালীর পরিবেশ উত্তপ্ত। শাহজাহানসহ এলাকার অনেক তৃণমূল নেতার বিরুদ্ধে এলাকায় নৃশংসতার অভিযোগ তুলে রাস্তায় নেমেছে গ্রামবাসী। শাহজাহানকে গ্রেফতারের দাবি জানান তিনি। শাহজাহান ছাড়াও সেই তালিকায় রয়েছেন তৃণমূল ব্লক সভাপতি শিবু হাজরা ও অঞ্চল সভাপতি উত্তম সর্দারও। শাহজাহানকে গ্রেপ্তারের দাবিতে সন্দেশখালীর নারীরা থানা ঘেরাও করেছে। শিবুর মুরগির খামারে আগুন লেগেছে।
শিবু সহ তৃণমূল শিবির পাল্টা আঘাত করে বলেছে যে বিজেপি ও সিপিএম এলাকায় উস্কানি দিয়ে ঝামেলা বাধাচ্ছে। শিবুর অভিযোগের ভিত্তিতে ইতিমধ্যেই গ্রেফতার করা হয়েছে প্রাক্তন সিপিএম বিধায়ক শেখর সর্দার, বিজেপি নেতা বিকাশ সিং সহ অনেককে। গত কয়েকদিন ধরে সন্দেশখালীতে উত্তেজনা বিরাজ করছে। বিধানসভায় এ নিয়ে মুখ খুললেন মুখ্যমন্ত্রী। সন্দেশখালির অশান্তির জন্য ইডি ও বিজেপিকে দায়ী করেন তিনি।
সন্দেশখালী পরিদর্শন করে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে জাতীয় মহিলা কমিশন। জাতীয় মহিলা কমিশনের রিপোর্টে পশ্চিমবঙ্গের এই পরিস্থিতিকে অত্যন্ত উদ্বেগজনক বলে উল্লেখ করা হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে স্থানীয় মহিলারা প্রতিনিধি দল, পুলিশ এবং তৃণমূল নেতাদের বিরুদ্ধে শারীরিক নির্যাতন ও যৌন হয়রানির অভিযোগ করেছেন। যে মহিলারা এই হয়রানির বিরুদ্ধে কথা বলার সাহস করেছিল তাদের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা হয়েছিল এবং পরিবারের পুরুষ সদস্যদের গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। নারীদের লাঞ্ছিত ও হয়রানি করা হচ্ছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রাজ্য সরকার ও প্রশাসনের কাজে অবহেলা ও ইচ্ছাকৃত উদাসীনতা রয়েছে। ডিজিপি জাতীয় মহিলা কমিশনের প্রতিনিধি দলকে সহযোগিতা করেননি। এসপি প্রতিনিধি দলকে কোনো সহায়তা দিতে ব্যর্থ হয়েছেন, এমনকি পুলিশ এস্কর্টও দিতে পারেননি। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রতিনিধিদলের পর ন্যাশনাল কমিশন ফর উইমেন চেয়ারপার্সন রেখা শর্মা স্থল পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে সন্দেশখালি যাবেন।
No comments:
Post a Comment