যে কোনও শুভ কাজ বা পূজো করার আগে প্রথমে শ্রী গণেশের পূজো করা হয়। ভগবান গণেশ হলেন বুদ্ধি ও বাকশক্তির দাতা। ভগবান গণেশ হলেন ভগবান শিব এবং মা পার্বতীর সন্তান এবং তাঁর বাহন হল ইঁদুর। গণেশের বাহন ইঁদুর কেন? আর কীভাবে বাহন হল ইঁদুর? চলুন জেনে নেই-
পৌরাণিক কাহিনী অনুসারে, রাজা ইন্দ্র প্রায়ই ইন্দ্রলোকে অপ্সরাদের নৃত্য উপভোগ করতে ব্যস্ত থাকতেন। রাজা ইন্দ্রের দরবারে ক্রাঞ্চ নামে এক গন্ধর্ব ছিলেন। ক্রাঞ্চ প্রায়ই অপ্সরাদের সঙ্গে রসিকতা করতেন। একবার রাজা ইন্দ্র তার উপর ক্রুদ্ধ হয়ে তাকে ইঁদুর হওয়ার অভিশাপ দেন। ইন্দ্রের অভিশাপে চঞ্চল ক্রাঞ্চ একটি শক্তিশালী ইঁদুরের রূপ ধারণ করে ঋষি পরাশরের আশ্রমে চলে যান। সেখানে গিয়ে সকলের ক্ষতি করতে থাকেন।
ইঁদুরের আঘাতে পরাশর ঋষির সমগ্র আশ্রম ধ্বংস হয়ে গেছে। আশ্রমে এই ইঁদুর সন্ত্রাসের কারণে পরাশর ঋষিসহ আরও অনেক ঋষি ভাবতে থাকেন কীভাবে এই ইঁদুর সঙ্গে মোকাবিলা করা যায়?
তখন পরাশর ঋষি ভগবান গণেশের আশ্রয় নেন। তখন ভগবান গণেশ ইঁদুরের আতঙ্ক থেকে মুক্তি পাওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন এবং গণেশ ফাঁস লাগিয়ে দেন। আর পাতাল লোক থেকে সেই শক্তিশালী ইঁদুরের গলায় বেঁধে সবার কাছে নিয়ে আসেন।
ইঁদুরের গলায় লুপ বাঁধার কারণে সেই ইঁদুরটি কিছু সময়ের জন্য অজ্ঞান হয়ে পড়ে। ইঁদুরের জ্ঞান ফিরে পাওয়ার সাথে সাথে তিনি গণেশের পূজো শুরু করেন এবং নিজের জীবন রক্ষার জন্য তাঁর কাছে প্রার্থনা করেন। ভগবান গণেশ ইঁদুরের পূজোয় খুশি হয়ে বর চাইতে বলেন। কিন্তু একথা শুনে দুষ্টু ইঁদুরের অভিমান হয়। সে তখন বলে , 'আমি তোমার কাছে কোনও বর চাই না, বিনিময়ে তুমি আমার কাছে কিছু চাইতে পারো।'
তাঁর এই অভিমানী কথা শুনে গণেশ মনে মনে হেসে বলেন, তুমি আমার বাহন হয়ে যাও। ইঁদুর রাজী হলে ভগবান গণেশ তার উপর আরোহণ করেন। ভগবান গণেশের ভারী শরীরের ওজনের কারণে ইঁদুর নিজের ভুল বুঝতে পেরে গণেশের কাছে প্রার্থনা করেন, যেন তিনি এই বোঝা বহন করার শক্তি দেন। এভাবে ইঁদুরের অহংকার অবসান ঘটিয়ে গণেশ তাঁকে চিরকালের জন্য নিজের বাহন করে নেন।
No comments:
Post a Comment