মাসিক বা পিরিয়ড প্রত্যেক সুস্থ স্বাভাবিক নারীর জীবনে একটি অতি স্বাভাবিক বিষয় ও নারীর স্বাস্থ্যের জন্য ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ একটি দিক। প্রতি মাসে একজন নারীর জরায়ু গর্ভধারনের জন্য তৈরি হয়। এই সময়ে জরায়ুতে ডিম্বানুকে ধরে রাখার জন্য রক্তে ভরা একটি পর্দা বা আস্তরণ তৈরী হয়। কিন্তু ওই সময়ে ডিম্বাণু শ্রক্রাণু দ্বারা নিষিক্ত না হলে জরায়ুর এই আবরণ ভেঙ্গে যায় এবং তা রক্তের সাথে বের হয়ে আসে। একেই মাসিক বলে। একজন মেয়ের ‘ঋতুস্রাব’ শুরু হওয়া মানে, তার শরীর ঠিকভাবে কাজ করছে এবং স্বাস্থ্য ঠিক রাখতে প্রয়োজনীয় হরমোন পাচ্ছে শরীর।
ঋতুস্রাব বা মাসিক সাধারণত ৯ থেকে ১৫ বছর বয়সে আরম্ভ হয় এবং ৪৪-৫৫ বছর বয়স পর্যন্ত চলে। তবে এই সময়ের আগে এবং পরেও হতে পারে। নারীদের পিরিয়ড বা ঋতুস্রাব নিয়ে আমাদের দেশে প্রচলিত আছে অনেক কুসংস্কার। এখনও অনেকেই মনে করেন পিরিয়ড চলাকালীন মেয়েরা রান্না করতে পারবে না। বাড়ির বাইরে যেতে পারবেনা। পুকুরে গোসল করতে পারবেনা ইত্যাদি ইত্যাদি। ঋতুস্রাব শুরু হলে অনেক মেয়েরা স্কুলে যাওয়া বন্ধ করে দেয় । কেন না, অন্য কেউ যদি জানে তার ঋতুস্রাব চলছে, তাহলে এ নিয়ে হাসাহাসি বা ঠাট্টা করতে পারে। যার জন্য সে নিজ থেকেই স্কুলে যাওয়া বন্ধ করে দেয় লজ্জার হাত থেকে বাঁচার জন্য। আর এই সংস্কৃতির জেরে ফলাফল হিসেবে অনেক মেয়ের পড়াশোনারও ক্ষতি হয় এমনকি অনেক ক্ষেত্রে স্কুল থেকে ঝড়ে পরে।
আমাদের দেশে এখনও অনেক নারী বাজারে গিয়ে স্যানিটারি ন্যাপকিন কিনতে লজ্জা পান। দোকানদারও ন্যাপকিন এমনভাবে কাগজে মুড়ে দেন, যেন এগুলো অবৈধ কোনো কিছু। যেন কত গোপন একটা ব্যাপার। স্যানিটারি ন্যাপকিন বিক্রি করার সময় একজন দোকানদার এতোটা রাখঢাক করবেন কেন ? আর মেয়েটিই বা কেন এতোটা ইতস্তত করে তা গোপন করে কিনবে?
অনেক মেয়েরা মাসিক সম্পর্কে না জানা ও বিষয়টি লজ্জার ভেবে বিভিন্ন ধরনের শারীরিক সমস্যায় পড়েন। তাদের অধিকাংশই পুরোনো কাপড় বা অন্য যেকোনো কাপড়ের কোনো অংশ মাসিক ব্যবস্থাপনার কাজে ব্যবহার করেন। একই কাপড় বারবার ব্যবহার করেন অনেকেই। এ কাপড়গুলো ঠিকমতো শুকানো হয় না। অনেক সময় স্বাস্থ্যসম্মত জায়গায় রাখা হয় না। এসব কারণে নানা ধরনের জীবাণু সংক্রমণের আশঙ্কা থাকে। এসব জীবাণু থেকে মেয়েরা বিভিন্ন রোগে ভুগে থাকেন। এসময় ইনফেকশন এড়াতে পরিষ্কার পরিছন্ন থাকা জরুরী। স্যানিটারি ন্যাপকিন বা কাপড় যেটাই ব্যবহার করা হোক তা প্রতি ৩ থেকে ৪ ঘণ্টা পর পর অবশ্যই পাল্টাতে হবে। কাপড় ব্যবহারের ক্ষেত্রে তা প্রতিবার ব্যবহারের পর পরিষ্কার জল ও সাবান বা ডিটারজেন্ট দিয়ে ধুয়ে এবং রোদে ভালোভাবে শুকিয়ে পরিষ্কার ও নিরাপদ স্থানে সংরক্ষণ করে ব্যবহার করতে হবে।
মোট কথা আমাদের প্রত্যেকের নিজ নিজ অবস্থান থেকে মাসিক সর্ম্পকে নানা কুসংস্কার গণসচেতনতার মাধ্যমে পরিহার করাতে হবে ও প্রত্যেকের পরিবারের সাথে এ নিয়ে খোলা মেলা আলোচনা করতে হবে।
No comments:
Post a Comment