বেসরকারি হাসপাতালগুলির বেপরোয়া কর্মকাণ্ডে এবার শক্ত হাতে লাগাম টানতে ছয় সদস্যের পর্যবেক্ষণ টিম। শিলিগুড়ি শহরে করোনার চিকিৎসাকে কেন্দ্র করে রুগী পরিবারের ওপর অত্যধিক বিলের চাপ, চিকিৎসায় গাফিলতির ভুড়ি ভুড়ি অভিযোগ সামনে আসছে নিত্যদিন। কোভিড বিপর্যয় এর মাঝে শিলিগুড়ি শহরের বেসরকারি হাসপাতালগুলির বানিজ্যিক স্বার্থসিদ্ধির এই চক্রের কাছে দিশেহারা হয়ে পড়ছে মানুষ। শিলিগুড়ির বেসরকারি হাসপাতালে কোথাও করোনা চিকিৎসার নামে কয়েক লক্ষ টাকা আদায় করার পরও রুগীকে পর্যাপ্ত অক্সিজেন সরবরাহ করা হচ্ছে না। আবার কোথাও অক্সিজেনের মাত্রা না বাড়িয়ে রুগীর শারীরিক স্থিতির অবনতি হওয়ার পর তাকে ভেন্টিলেশনে দিয়ে রুগী পরিবারের ওপর বিলের চাপ বাড়ানো হচ্ছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই নার্সিংহোমগুলি ভর্তি নিচ্ছে ভিন জেলার রুগীদের।
অথচ শহরের রুগীদের ক্ষেত্রে জানানো হচ্ছে শয্যা নেই। শিলিগুড়ি প্রধাননগর, সেবক রোডের বেসরকারি নার্সিংহোমে এই কারবার চলছে।প্রথম সারির বেসরকারি হাসপাতালগুলির এই দৌড়ে পিছিয়ে নেই কলেজপাড়া, হাকিম পাড়া, তিলক রোডের তুলনামূলকভাবে ছোট শহরের দ্বিতীয় সারিতে থাকা বেসরকারি হাসপাতালগুলিও। কলেজ পাড়ার নন্দলাল বাসু সরণির একটি নার্সিংহোমে শিলিগুড়ি স্থানীয় করোনা আক্রান্ত রুগীদের ক্ষেত্রে সাফ জানিয়ে দেওয়া হচ্ছে শয্যা নেই। এখানে করোনা রুগীর চিকিৎসা হচ্ছে না।অথচ দালাল মারফৎ ভিন জেলার কোভিড রুগীদের ভর্তি নিয়ে চলছে চিকিৎসা বলে অভিযোগ আসছে। এর কারণ ভীন জেলার রুগীদের ক্ষেত্রে শহরের নেতা মন্ত্রী প্রশাসনের সঙ্গে পরিচিতি না থাকার জেরে অত্যধিক বিল ধার্য করার ক্ষেত্রে কোনো সমস্যায় পড়তে হচ্ছে না হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে।
আর শহরের স্থানীয়দের ক্ষেত্রে বিল অথবা চিকিৎসা গাফিলতি হলে রাতারাতি তা নেতা পুলিশ প্রশাসনের কানে চলে যায়, যাতে চাপে পড়তে হয় হাসপাতালকে। শিলিগুড়ি পুরো নিগমের প্রশাসক বোর্ড দুই দফায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে জরুরী বৈঠক করেন। তবে তাতেও খাস লাভ হয়নি। তাই জেলা প্রশাসনের তরফে এবারে কড়া হাতে নিয়ন্ত্রণরেখা টানতে শিলিগুড়ি মহকুমা শাসক, শিলিগুড়ি পুলিশ কমিশনার, জেলা স্বাস্থ্য দপ্তরের আধিকারিক, উত্তরবঙ্গ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল এবং জেলা স্বাস্থ্য দপ্তরের বিশিষ্ট চিকিৎসকদের নিয়ে একটি টিম গঠন করা হয়েছে। এই টিম শহরের সমস্ত সরকারি বেসরকারি হাসপাতালের করোনা আক্রান্ত চিকিৎসার ক্ষেত্রে যাবতীয় নজরদারি চালাবেন। সরকারি গাইডলাইন অনুযায়ী কোভিড আক্রান্তের চিকিৎসা হচ্ছে কিনা, প্রত্যেকটি বেসরকারি হাসপাতালে স্বাস্থ্য সাথী কার্ড এর মান্যতা দেওয়া, অনিয়ন্ত্রিত বিলের উপর লাগাম যাবতীয় বিষয়গুলির ওপর নজর দেবে।
দার্জিলিং জেলার পাহাড়ী অঞ্চলের ক্ষেত্রে এই টিমে থাকছে জেলা পুলিশ সুপার, জিটিয়ে প্রিন্সিপাল সেক্রেটারি। এছাড়াও এই টিমে অ্যাসিস্ট্যান্ট ড্রাগ কন্ট্রোলার বোর্ডের একজন সদস্য থাকবেন। এদিন শিলিগুড়ি পুরো প্রশাসক বোর্ডের সদস্য রঞ্জন সরকার ও পুর প্রশাসক গৌতম দেব একাধিক অভিযোগ ওঠা বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে সশরীরে হানা দেন। সেখানে পুরো প্রশাসক বোর্ডের সদস্যদের তরফে জানিয়ে দেওয়া হয় সমস্ত বেসরকারি হাসপাতালে স্বাস্থ্য সাথী কার্ডকে মান্যতা দিয়ে রুগী পরিজনেদের সুবিধার্থে তা হাসপাতালে বাইরে ডিসপ্লে বোর্ডে টাঙিয়ে দিতে হবে। সেখানে কত শয্যা রয়েছে নিত্য দিন তার উল্লেখ্যও করতে হবে। যাতে রুগী পরিজনদের অযথা হেনস্থা হতে না হয়। পাশাপাশি প্রশাসক বোর্ডের সদস্য রঞ্জন সরকার জানান যেহেতু অতিমারির পরিস্থিতি চলছে সেখানে প্রতিটি বেসরকারি হাসপাতালকে তার অতিরিক্ত ১০%শয্যা আর্থিকভাবে দুর্বল রুগীদের চিকিৎসার জন্য রাখতে হবে সেক্ষেত্রে তা পরিচালনায় সহায়তা করবে পুরনিগম।
No comments:
Post a Comment