বৃদ্ধ বাবা ও ছেলের অস্বাভাবিক মৃত্যু হাওড়ার বেলুড়ের ঘোষেস লেনে। বাবার নিথর দেহ পড়েছিল বিছানায়। পাশেই ছেলের দেহ ঝুলছিল সিলিংয়ে। ঘটনায় চাঞ্চল্য। মা কোভিড আক্রান্ত হয়ে ভর্তি রয়েছেন ঘুসুড়ির জয়সোয়াল হাসপাতালে। শনিবার বাবা ও ছেলের কোভিড টেস্টের কথা ছিল। মানসিক হতাশায় এই ঘটনা বলে মনে করা হচ্ছে।
বৃদ্ধের বৌমা ও নাতি বাপের বাড়ি ছিলেন। প্রতিদিনের মতোই এদিনও সকালে বৌমা বাপের বাড়িতে এসে এই ঘটনা দেখেন। জানা গেছে, মা করোনা আক্রান্ত হয়ে ভর্তি ঘুসুড়ির জয়সোয়াল হাসপাতালে। বাবাও ছিলেন অসুস্থ। সেই পরিস্থিতিতে বালি থানার অন্তর্গত বেলুড় ঘোসেস লেনের বাড়ি থেকে উদ্ধার ছেলে সুরজিৎ কেরানির (৩৮) ঝুলন্ত দেহ। বিছানায় মৃত অবস্থায় পড়েছিলেন বাবা তিনকড়ি কেরানি(৬৫)। দেহ উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠায় পুলিশ। এদিন বিষয়টি প্রথমে নজরে আসে বাড়ির বৌমার। এই ঘটনায় এলাকায় শোকের ছায়া।এব্যাপারে মৃতের স্ত্রী রূপা কেরানি জানান, শাশুড়ির কোভিড ধরা পড়েছিল। সেই কারণে তাঁকে ভর্তি করা হয়েছিল জয়সোয়াল হাসপাতালে।
মাকে হাসপাতালে ভর্তি করার পর থেকেই মানসিক অবসাদে ভুগছিলেন সুরজিৎ। আড়াই বছরের শিশু বাড়িতে থাকার জন্য সাবধানতাবশত তাঁকে বাপের বাড়ি রেখে দিয়ে আসা হয়। কিন্তু সেখান থেকে দু'বেলা যাতায়াত করে বাড়ির কাজকর্ম করে দিয়ে আসছিলেন রূপাদেবী। তিনি আরও জানান, গত শুক্রবার শ্বশুরের জ্বর এসেছিল। সেইজন্য ওষুধ খাওয়ানো হয়। তাতে জ্বর কমে যায়। পরে আবার কাশি শুরু হওয়ায় ফোনে তাঁকে জানান হয় তাঁর স্বামী এবং শ্বশুর দু'জনেই করোনা পরীক্ষা করবেন। তাঁকে এও জানানো হয় যে বাড়িতে তালা দিয়ে যাওয়া হবে। সেই কারণে ফোন করলে তবে যেন তিনি শ্বশুর বাড়িতে আসেন। কিন্তু দীর্ঘক্ষণ ফোন না করায় স্বামী সুরজিৎকে নিজেই ফোন করেন রূপা। কিন্তু ফোন কেউ ধারেননি। বারে বারে ফোন করার পর ফোন না ধরায় তিনি শ্বশুরবাড়িতে চলে আসেন। এসে দেখেন দরজা ঘরের জানালা বন্ধ ছিল।
দরজার কাছে গিয়ে দেখেন ঘরের দরজা ভেজানো। এরপর ঘরের দরজা খুলে দেখতে পান তার স্বামী ঝুলন্ত অবস্থায় রয়েছে। এর ঘরে বিছানায় অচৈতন্য অবস্থায় পড়েছিলেন তাঁর শ্বশুর। রূপাদেবীর বক্তব্য অনুযায়ী, বাবা-মা অন্ত প্রাণ ছিলেন তার স্বামী। মায়ের করোনা হওয়ায় সুরজিৎ মানসিক অবসাদে ভুগছিলেন। তার মধ্যে বাবার জ্বর এবং কাশি হওয়ায় আরও মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন। করোনার আতঙ্কে এই কাজ করেছেন বলে মনে করছেন তিনি। পুলিশ জানিয়েছে, তিনদিন আগে মাকে জয়সোয়াল কোভিড হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল বলে পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে। এরপর শুক্রবার থেকে বাবাও অসুস্থ ছিলেন। অনুমান করা হচ্ছে, শনিবার সকালে বাবাকে মৃত অবস্থায় দেখেই মানসিক হতাশায় নিজেও আত্মঘাতী হন ছেলে। পুলিশ দেহ দুটি উদ্ধার করে হাওড়া জেলা হাসপাতালে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠায়।
No comments:
Post a Comment