সাজাপ্রাপ্ত বন্দীদের সঙ্গে পরিজনদের এক দীর্ঘ অনিশ্চিত দূরত্ব রেখা কায়েম করছে কোভিড অতিমারি। বিচারপ্রার্থীদের হতাশা দূর করতে ভ্যারচুয়াল মোলাকাতে জোড় দিচ্ছে শিলিগুড়ির সংশোধনাগার। বন্দি দশায় সংশোধনাগারের দপ্তরে কম্পিউটার স্ক্রিনেই মিলছে পরিবারের সান্নিধ্য। বিশ্ব জুড়ে চলা বন্ধি দশায় দূতাবাসের মাধ্যমে ভিনদেশী বন্দীদের সঙ্গে ভিডিও মিট করছে পরিবার। শিলিগুড়ি সংশোধনাগারে ৪০০-৪৫০ বন্দি রয়েছে। তারমধ্যে প্রায় ২৫জনের মতো রয়েছে যাবৎজীবন সাজাপ্রাপ্ত। যাদের করোনার প্রথম ঢেউয়ে দীর্ঘ তিন মাস পারডনে মুক্তি দেওয়া হয়। তবে এবারে তেমন কোনো বিশেষ নির্দেশিকা এখনও এসে পৌঁছায়নি। অন্যদিকে করোনার সময় থেকেই সংশোধনাগারে আসা পরিজনের সংখ্যা ক্রমাগত কমেছে।
বিচারপ্রার্থীদের খোঁজ নিতে সংশোধনাগারে সপ্তাহের নির্দিষ্ট সময়ে আসছেন না পরিবারের সদস্যরা।সংশোধনাগারের পুলিশকর্মী জানান গুরুতর আসামীদের ক্ষেত্রে দীর্ঘমেয়াদি সাজা ঘোষণার পর প্রায়ই দেখা যায় পরিবারের সদস্যরা তার সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন। তবে কোভিডের সময় থেকেই লক্ষ্য করা যাচ্ছে সংশোধনাগারে সেভাবে আর আসছেন না কোনো বিচারপ্রার্থীদের পরিবার পরিজনেরা। লকডাউনের জেরেও বিচার প্রার্থীদের সঙ্গে দেখা করা সম্ভব হচ্ছেনা পরিজনেদের। সেক্ষেত্রে দীর্ঘ অনিশ্চিত দূরত্ব রেখা মুছতে শিলিগুড়ি সংশোধনাগার ভ্যারচুয়াল ই-প্রিজন ওয়েব সাইটকে মাধ্যম করে ব্যবস্থা করছে ভ্যারচুয়াল মিটের। শিলিগুড়ি সংশোধনাগারের জেল সুপার কৃপাময় নন্দী বলেন অতিমারীর সময়কালে বিচারপ্রার্থীদের হতাশার হাত থেকে মুক্তি দিতে ই-মোলাকাত অর্থাৎ ভ্যারচুয়াল মাধ্যমে ভিডিও কলিংয়ের ওপর অধিক গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।
সেক্ষেত্রে ১৪দিনে একবার ভিডিও কলিংয়ের মাধ্যমে বিচারপ্রার্থীদের সঙ্গে পরিবারের সদস্যরা সরাসরি কথোপকথন করতে পারে। তিনি বলেন ই প্রিজনার ওয়েব সাইটের ভিসি লেখা নির্দিষ্ট ফর্ম রয়েছে। সেখানে প্রতিটি সংশোধনাগারের নাম, বিচারপ্রার্থীর নাম এবং ভিজিটরদের নির্দিষ্ট ফটো সম্বলিত আইডি পেশ করতে হয়। আমাদের সংশোধনগারের দপ্তরে আবেদন এলে সে মোতাবেক সাক্ষাতের তারিখ ও নির্দিষ্ট সময় জানিয়ে দেওয়া হয় পরিজনদের। সেই নির্ধারিত সময়ে ভিজিটরকে একটি লিঙ্ক দেওয়া হয়।সংশোধনাগারের দপ্তরে কম্পিউটারের স্ক্রিনের ওয়েব ক্যামেরায় সামনে নিয়ে আসা হয় বন্দীকে। তিনি বলেন এ রাজ্যের আটটি সেন্ট্রাল জেল-সহ মোট ৬১টি সংশোধনাগারেই এটি চালু রয়েছে। শিলিগুড়ির ক্ষেত্রে আগে সেভাবে পরিজনদের কাছ থেকে প্রতিক্রিয়া মেলেনি। তবে করোনা সংক্রমন বৃদ্ধি পাওয়ার সময় থেকেই ভিডিও কলিংয়ের আবেদন আসছে।
সপ্তাহে সংশোধনাগারের দপ্তরে১৫-২০টি ভিডিও কলের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। এক্ষেত্রে সুবিধে হলো কথোপকথনের পুরো বিষয়টি স্পিকারে চলছে। এতে বন্দীদের গতিবিধির ওপর আন্দাজ থাকছে। ফলে জেলে বসে কোনোরকম প্রতিহিংসা মূলক কথপোকথন করতে পারছে না তারা। নিরাপত্তার স্বার্থে ভিডিও কলিংয়ের পুরো কথোপোকথনই দপ্তরের ডাটাবেসে রেকর্ড থাকছে। তবে ভিডিও কলিংয়ের এই নিয়ম লাগু থাকছে ভারতীয় নাগরিকদের ক্ষেত্রে। ভিন দেশের বিচারপ্রার্থীদের ক্ষেত্রে দূতাবাস মারফৎ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের মাধ্যমে এই পুরো প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হয়। লকডাউনের কারনে আন্তর্জাতিক বিমান পরিষেবা বন্ধ। জেল সুপার জানান সম্প্রতি বাংলাদেশ ও নাইজেরিয়ার দুই বন্দির ভ্যারচুয়াল মিটের আবেদন এসেছিল, যাদের ভিডিও কলিংয়ের ব্যবস্থা করা হয়। পাশাপাশি কোভিড নিরাপত্তার বিষয়ে তিনি জানান সংশোধনাগারে আসা নতুন বিচার প্রার্থীদের শিলিগুড়ির সংশোধনাগারের মূল ভবন থেকে পৃথক একটি ব্লগে ১৪দিন কোয়ারেন্টাইন করা হচ্ছে। পাশাপাশি নিত্যদিন রুটিন চেকআপ করা হচ্ছে তাদের।
No comments:
Post a Comment