নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা ১৭ মার্চ :- একেই বোধহয় বলে সুদে আসলে উশুল করা।
রাজ্য ক্রেতা সুরক্ষা আদালতের নজিরবিহীন রায়। মিনারেল ওয়াটার এর বোতল পিছু ৭ টাকা অতিরিক্ত নেবার মাশুল হিসেবে প্রায় ৬৬ হাজার টাকা ফাইন গুনতে হোলো হোটেল কর্তৃপক্ষকে।
ঘটনাটি ঠিক কি ঘটেছিল ঃ-
জলপাইগুড়ি শহরের বাসিন্দা অভিমুন্য সিং ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ুয়া। ২০১৭ সালের ২৯ শে জুন তিনি তার বন্ধুদের নিয়ে ময়নাগুড়ির একটি অভিজাত রেস্টুরেন্টে গিয়ে খাওয়াদাওয়া করেন। খাবারের সাথে তারা ঐ রেস্টুরেন্ট থেকে ৩ বোতল মিনারেল ওয়াটার নিয়েছিলেন।
খাওয়া শেষে বিল মেটাতে গেলে তিনি লক্ষ করেন যেই মিনারেল ওয়াটার এর বোতল পিছু সর্বোচ্চ দড় ১৮ /- টাকা। তা তাদের বিলে ধরা হয়েছে ২৫/- প্রতি বোতল হিসেবে।
তিনি হোটেল কর্তৃপক্ষর সাথে কথা বলেন। ১৮/- বোতল প্রতি দাম নিতে অনুরোধ করেন। কিন্তু হোটেল কর্তৃপক্ষ দাম কমাতে রাজি হয়না। এরপর তিনি বিল মিটিয়ে বাড়ি ফিরে এসে ২০১৭ সালের ৩ জুলাই জলপাইগুড়ি ক্রেতা সুরক্ষা আদালতে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।
জলপাইগুড়ি ক্রেতা সুরক্ষা আদালতের রায় ঃ-
এরপর ২০১৭ সালের ২২ শে সেপ্টেম্বর মামলার রায় দান করে জলপাইগুড়ি ক্রেতা সুরক্ষা আদালত। রায়ে বলা হয় বোতোল পিছু ৭ /- অর্থাৎ মোট তিন বোতলে ২১/- ফেরত দিতে হবে। একইসাথে ১৫০০০ টাকা ক্ষতিপূরন এবং ৩০০০ /- যাতায়াত সহ কুড়ি হাজার টাকা অভিমুন্য কে ক্ষতিপূরণ বাবদ দিতে হবে। একইসাথে ওয়েস্ট বেঙ্গল স্টেট কনজিউমার ওয়েলফেয়ার ফান্ড কে আরো ২০০০০/- টাকা জমা দেবার নির্দেশ দেয় আদালত। অর্থাৎ মোট ৪১০২১ /- ক্ষতিপূরন এক মাসের মধ্যে মিটিয়ে দিতে বলা হয়। অন্যথায় এরসাথে ৮% হারে সুদ দিতে হবে বলে রায় দান হয়।
ঘটনায় অভিমন্যুর আইনজীবী সুমিত কুমার জানান জলপাইগুড়ি ক্রেতা সুরক্ষা আদালতের রায়ে সন্তুষ্ট না হয়ে হোটেল কর্তৃপক্ষ রাজ্য ক্রেতা সুরক্ষা আদালতের দারস্থ হয়। সেই মামলার শুনানি হয় গত ৫ ফেব্রুয়ারী ২০২১ তারিখে। রায়দানে হোটেল কর্তৃপক্ষর আবেদন খারিজ করে জলপাইগুড়ি ক্রেতা সুরক্ষা আদালতের রায় বহাল রাখে রাজ্য ক্রেতা সুরক্ষা আদালত। পাশাপাশি আরো ১০০০০/- অতিরিক্ত ক্ষতিপূরণ ধার্য্য করে বিষয়টিকে জলপাইগুড়ি ক্রেতা সুরক্ষা আদালতে মিটিয়ে ফেলতে নির্দেশ দেয়।
রাজ্য ক্রেতা সুরক্ষা আদালতের রায়ে নড়েচড়ে বসে হোটেল কর্তৃপক্ষ। অবশেষে আজ জলপাইগুড়ি ক্রেতা সুরক্ষা আদালতে বিষয়টি নিষ্পত্তি করে ক্ষতিপূরনের পুরো টাকা সুদ সমেত দুটি চেকের মাধ্যমে মিটিয়ে দিয়ে মামলা নিষ্পত্তি করলো হোটেল কর্তৃপক্ষ । ঘটনায় হোটেল ম্যানেজার সন্দীপ মিত্র তাদের বিরুদ্ধে ওঠা যাবতীয় অভিযোগ স্বীকার করে নিয়ে বলেন সেদিন আমাদের ভুল ছিল। আমরা তখন নতুন ব্যাবসায়ী ছিলাম। আমরা যাবতীয় ক্ষতিপূরণ আদালতের মাধ্যমে মিটিয়ে দিলাম। ঘটনায় অভিমন্যু সিং বলেন আইনের প্রতি আস্থা ছিলো। তাই দীর্ঘ চার বছর ধরে মামলা লড়ে অবশেষে আজ সুবিচার পেলাম। আমার এই অভিজ্ঞতার মধ্যে দিয়ে একটাই ম্যাসেজ দিতে চাই যে কোনো জিনিষের সর্বোচ্চ মূল্য সেই জিনিষের গায়ে প্রিন্ট করা থাকে। তার চেয়ে বেশি নেওয়া আইন বিরুদ্ধ। আমরা সাধারণত এইসব গায়ে লাগাইনা। আর এতেই পেয়ে বসে বিক্রেতারা। ধৈর্য ধরে আইনি লড়াই চালিয়ে গেলে তার ফল অবশ্যই আমাদের মতো সাধারন ক্রেতাদের পক্ষে আসে।
No comments:
Post a Comment