মহাশিবরাত্রির উৎসবের বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। এই বছর মহাশিবরাত্রি উৎসব ১৮ই ফেব্রুয়ারি। ভগবান শিব এবং মা পার্বতীর বিয়ে হয়েছিল ফাল্গুন মাসের কৃষ্ণপক্ষের চতুর্দশীতে। এই কারণে প্রতি বছর মহাশিবরাত্রি উৎসব পালিত হয়। শুধু গঙ্গা জল ও বেলপাতা দিলেই ভোলে বাবা খুশি হয়ে যান। কিন্তু শিবলিঙ্গে কখনও শঙ্খ দিয়ে জলাভিষেক করতে নেই। চলুন জেনে নেই কারণ-
কিংবদন্তি অনুসারে, শঙ্খচুড় নামে এক শক্তিশালী ও পরাক্রমশালী রাক্ষস ছিল। শঙ্খচড়ের পিতার নাম ছিল দৈত্য দম্ভ। বহু বছর ধরে দৈত্যদম্ভের কোন সন্তান হচ্ছিল না, তারপর সন্তান লাভের আকাঙ্ক্ষায় তিনি ভগবান বিষ্ণুর কঠোর তপস্যা করতে লাগলেন।
দৈত্যরম্ভের তপস্যায় সন্তুষ্ট হয়ে ভগবান বিষ্ণু তাঁকে পুত্র লাভের বর দিয়েছিলেন এবং তাঁকে তিনটি জগতে অজেয়তার বর দিয়েছিলেন। কয়েক বছর পর শঙ্খচূড় বড় হলে তিনি ব্রহ্মাকে খুশি করার জন্য কঠোর তপস্যা শুরু করেন।
বছরের পর বছর তপস্যায় খুশি হয়ে ব্রহ্মা অজেয় হওয়ার বর পেয়েছিলেন। এছাড়াও ব্রহ্মা শঙ্খচূড়কে ও শ্রীকৃষ্ণের কবচ প্রদান করেন। এ ছাড়া ব্রহ্মা শঙ্খচূড়কে ধর্মধ্বজের কন্যা বৃন্দাকে বিয়ে করার আদেশ দেন, যিনি পরবর্তীতে তুলসী নামে পরিচিত হন।
ব্রহ্মার বর পেয়ে কিছুদিন পর বৃন্দার সাথে শঙ্খচূড়ের বিয়ে হয়। এভাবে ভগবান বিষ্ণু এবং ব্রহ্মার আশীর্বাদ পাওয়ার পর শঙ্খচুর অত্যন্ত শক্তিশালী এবং অহংকারী হয়ে ওঠেন। অতঃপর তিনি তিন জগতে রাজত্ব করতে থাকেন এবং যুদ্ধে দেবতাদের পরাজিত করতে থাকেন। তারপর শঙ্খচূড়ের আতঙ্কে ভীত হয়ে সমস্ত দেব-দেবীরা ভগবান বিষ্ণুর কাছে সাহায্য চাইতে গেলেন।
ভগবান বিষ্ণু ও ব্রহ্মা স্বয়ং যেহেতু শঙ্খচূড়কে অজেয় হওয়ার বর দিয়েছিলেন, এই কারণে তারা শিবের কাছে প্রার্থনা করতে বলেন। শঙ্খচূড় ক্রমাগত শ্রীকৃষ্ণ কবচ এবং দেবী তুলসীর পতিব্রত ধর্মের সুফল পাচ্ছেন, এই কারণে শিবও তাকে হত্যা করতে সক্ষম হননি। তখন ভগবান বিষ্ণু ব্রাহ্মণের রূপ ধারণ করে অসুর রাজা শঙ্খচূড়ের কাছ থেকে উপহার হিসেবে শ্রীকৃষ্ণ কবচ নিয়ে নেন এবং তারপর শঙ্খচূড়ের রূপ ধারণ করেন এবং দেবী বৃন্দার শীল হরণ করে শালীনতা অপহরণ করেন। শঙ্খচূড়ের কাছে শ্রীকৃষ্ণ কবচ না থাকায় যুদ্ধক্ষেত্রে শিব ত্রিশূল দিয়ে শঙ্খচূড়কে পুড়িয়ে ফেলেন এবং তাঁর অস্থি দিয়ে শঙ্খের জন্ম হয়।
তবে শঙ্খচূড় ছিলেন বিষ্ণুর ভক্ত এবং লক্ষ্মী-বিষ্ণু শঙ্খ জল খুব পছন্দ করেন এবং সমস্ত দেবতাকে শঙ্খ থেকে জল নিবেদনের বিধান রয়েছে। ভগবান শিবের হাতে শঙ্খচূড় বধের কারণে ভগবান শিবের উপাসনায় কখনও শঙ্খ বাজানো হয় না, বা শঙ্খের খোলস দিয়ে ভগবান শিবের জলাভিষেকও করা হয় না।
No comments:
Post a Comment