মনে করা হয় মুঘলরা হয়তো মাংসের প্রতি বেশী আকৃষ্ট। কিন্তু তা নয়। মুঘলদের খাবার ছিল প্রচলিত বিশ্বাসের সম্পূর্ণ বিপরীত। আকবর থেকে শুরু করে আওরঙ্গজেব পর্যন্ত তিনি শাকসবজি এবং বিভিন্ন ধরনের শাক খেতে পছন্দ করতেন।
সম্রাট আকবর একজন ভালো শিকারী হিসেবে বিবেচিত হলেও তিনি মাংস খেতে বিশেষ আগ্রহী ছিলেন না। শারীরিক শক্তি বজায় রাখার জন্য তার কাছে মাংস ছিল একমাত্র বিকল্প, তাই তিনি মাঝেমধ্যে খাবারে মাংস অন্তর্ভুক্ত করতেন।
ঐতিহাসিকদের মতে, সুলতানি আমলের প্রথম দিকে মুঘল সম্রাটরা শুক্রবারে মাংস খাওয়া এড়িয়ে চলতেন। সময়ের সাথে সাথে যোগ হয় আরও একটি দিন, তাহল শুক্রবারের পাশাপাশি রবিবারও মাংস এড়িয়ে চলতে শুরু হয়।
ধীরে ধীরে তার মাংস পরিহারের পরিধি বাড়তে থাকে। মাসের প্রথম দিনে মাংস না খাওয়ার প্রথা শুরু হয়, পুরো মার্চ মাস এবং জন্ম মাসেও মাংস খাওয়া বন্ধ করা হয়। যা পরবর্তী প্রজন্মেও অব্যাহত হয়। তখন তাদের খাবার হত শুধু দই-ভাত দিয়ে।
মুঘলদের খাবার ৩ ভাগে বিভক্ত ছিল:
আকবরের নয়টি মণির অন্তর্ভুক্ত আবুল ফজল তাঁর আইন-ই-আকবরী বইয়ে মুঘলদের খাবার ও রান্নাঘরের কথা উল্লেখ করেছেন। সেখানে আকবরের সময়ে খাবার তিন ভাগে বিভক্ত ছিল।
প্রথম: সেই বিশেষ ধরনের খাবার যাতে মাংস একেবারেই অন্তর্ভুক্ত ছিল না। একে বলা হতো সুফিয়ানা খাবার।
দ্বিতীয়: যে খাবার মাংস ও শস্য দিয়ে তৈরি করা হয়েছিল। তবে এতে খুব বেশি মশলা ব্যবহার করা হতনা।
তৃতীয়: এ ধরনের খাবার যাতে মাংস বেশি ব্যবহার করা হতো। এর সাথে আরো বেশি ঘি ও মশলা ব্যবহার করা হতো।
আবুল ফজল লিখেছেন, সম্রাটের প্রথম পছন্দ ছিল ডাল, মৌসুমি সবজি ও পোলাও। সম্রাটের পছন্দের কথা মাথায় রেখে বাবুর্চিরা শাকসবজি থেকে তৈরি বিভিন্ন ধরনের খাবার তৈরি করতেন। যার মধ্যে অনেক ধরনের ক্যাসারোল অন্তর্ভুক্ত ছিল।
ঔরঙ্গজেবের সময় :
কালের সাথে সাথে মাংস এড়িয়ে যাওয়া আওরঙ্গজেবের অভ্যাসে পরিণত হয়। ফলস্বরূপ, তাকে সাধারণ খাবার দেওয়া হত। রাজকীয় বাবুর্চিরা বিভিন্ন শাকসবজি থেকে তার জন্য বিশেষ খাবার তৈরি করার চেষ্টা করতেন।
তাজা ফল বিশেষ করে আম ছিল আওরঙ্গজেবের দুর্বলতা। এ কারণেই তাঁর বাবুর্চিরা খাবারে ছোলার ডাল দিয়ে গমের তৈরি কাবাব ও পোলাও বানাতেন। এটি তার প্রিয় খাবারের একটি ছিল। ঐতিহাসিকরা বলেন, খাবারে পনির ও ফলের তৈরি কোফতার ব্যবহার ঔরঙ্গজেবের ভালো লাগতো।
No comments:
Post a Comment