মৃদুলা রায় চৌধুরী : কখনও কখনও মনে হয় এখানেই শেষ এটাই শেষ, সব শেষ, চোখ দিয়ে বেরিয়ে যায় জল, কী করা উচিৎ এবার, মানুষ ভেবে কূল কিনারা কিছু পায় না, শুধু মনে হয় চোখে অন্ধকার, রাস্তা বন্ধ।তখন কী? কী তখন? নিজেকে শেষ করে দিতে মন চায়?
বিশেষ করে একটি মেয়ের, বিয়ের পর শ্বশুর বাড়ি যায় আর সেখানে গিয়ে সে জানতে পারে তাঁর স্বামীর মদ লাগেই, তার শাশুড়ি শ্বশুর, ছেলেকে বোঝানোর বদলে সেই নব বিবাহিত মেয়ে টিকে বলে " ছেলেরা তো খাবেই । তাতে তোর কী? সপ্তাহে একটা দিনই তো খায় ছেলেটা। " "রাতে কাজ থেকে ফিরে এলে তুই পাশের ঘরে ঘুমোস, আর সকাল হলেই তুই কাজে লেগে যাবি। আর নাহলে তুই রাতে খেয়ে তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়বি, আমি বাবুকে নাহয় বুঝিয়ে বলবো।"
মেয়েটা কী করবে! নতুন বিয়ে হয়েছে বরকে রাতে পাশেও পাবে না? কথা না বাড়িয়ে মেনে নেয় শাশুড়ির সেই শর্ত। সব কাজ সেরে বিছানায় যায়, রাত ১টা কখনও ১:৩০ ঘুমোনো অভ্যেস নেই, আবার ভোরে ওঠা, বিছানায় যাওয়ার সাথে সাথেই ঘুমিয়ে পড়ে।
একদিন এমনই চলতে চলতে মেয়েটি হঠাৎ জানতে পারে, বরের আরও ৩-৩টে বিয়ে হয়েছিল কিন্তু বিয়ের আগে শ্বশুর বাড়ীর লোকেরা তা জানায় নি, এমনকি বরও না। সে মোছে নিজের চোখের জল।
বর মদ্য পান করে এসে পাশে ঘুমোয়। এমনি চলতে চলতে একদিন রান্না করতে করতে হাত পুড়ে যায় মেয়েটির, জ্বর এসেছে এবার মেয়েটির হাত ও শরীর শাশুড়ি দেখেও না দেখার ভান করে। মেয়েটি একলা একা মন খুলে যে কাঁদবে তাও পারেনা।
এবার মেয়েটি পিরিয়ডের সমস্যা ধরা পরে। শ্বশুর শাশুড়ি বর ৩ জনই মেয়েটি আর তার বাপের বাড়ীকে দোষ দিতে থাকে। কেন আগে বলা হয়নি যে মেয়েটির পিরিয়ডে সমস্যা আছে। সেই পিরিয়ডের সময় বর মদ্য পান করে এসে ইন্টারকোর্স করতে পারেনা।
এতেও তাদের কথা মুখ বুঝে শুনে নেয় কিছু বলতে চায়না সে। কী বলবে জায়গা নতুন, লোকেরা নতুন, কথায় বাড়ে কথা তাই, অগত্যা।
ওয়াশরুমে গিয়ে চোখের জল মোছে, মেয়েটির শুধু প্রশ্ন জাগে শাশুড়ির ওপর, 'আচ্ছা আপনিও তো মেয়ে, আপনার কী কখনও এমন সমস্যা হয়নি? দোষ দিচ্ছেন কেন এভাবে? '
মেয়েটি এবার বাপের বাড়ি যেতে চায়, এখানে এবার শাশুড়ি ও বর বলে " কেন যেতে চাইছিস সেখানে, বর ছাড়াও আরেক জন আছে বোধ হয় না, মা বাবার কোনও শিক্ষা নেই এই মেয়ের ওপর, ছিঃ!"
এইবার মেয়েটির সহ্য হয় না রুখে দাঁড়ায় সে, বরের মদ পানকেও, বর গায়ে হাত তুলতে এলে ঘুরে দাঁড়ায় সে। প্রতিবাদ করে। নিজেকে সে বলে 'আর কত আর কত সহ্য করবি' চোখের জল মুছতে মুছতে প্রতিবাদ করে সে।
না আত্মহত্যা করেনি সে। হ্যাঁ ফিরে আসে সে সেখান থেকে। হ্যাঁ জয়ী হয়েছে সে। শুধু একটি মাত্র পদক্ষেপ করে। পদক্ষেপ ঘুরে দাঁড়ানোর।
তাই আত্মহত্যা নয়, প্রতিবাদ আর খানিকটা দিন নিজেকে সময়, আত্মহত্যাতো দু মিনিটের কাছ, কিন্তু সেই মানুষগুলো যারা আপনার দিকে চেয়ে বেঁচে আছে, মা ও বাবা। তাঁদের জন্য ঘুরে দাঁড়ান।
নেমেছে রাত তারারা এসেছে আকাশে,
একলা শুন্য মনের আকাশে জেগে আছে এক ছোট্ট তারা
দেখছে সবই বুঝছে সবই
বলছে না কিছু মুখ ফুটে
হয়তো হয়েছে জয়ী সে
কিন্তু মনের কোণে চোখ দিয়ে যে পড়ে জল।
No comments:
Post a Comment