নিউজ ডেস্ক: আমাদের এই বিশ্ব ব্রক্ষ্মান্ডে শত শত শিক্ষক রয়েছেন, যারা তাদের শিক্ষার মাধ্যমে বিশ্বকে আলোকিত করে দিয়েছিলেন। প্রাচীন ভারতেরও এমন অনেক শিক্ষক রয়েছেন, যাদের দেওয়া শিক্ষা আজও প্রাসঙ্গিক বলে বিবেচিত হয়। শিক্ষক দিবস উপলক্ষে এমনই কয়েকজন শিক্ষক বা শিক্ষা গুরুদের সন্মান জানিয়ে আজকের এই প্রতিবেদন।
১.গুরু বশিষ্ঠ: সপ্ত ঋষির মধ্যে একজন হলেন গুরু বশিষ্ঠ। রাজা দশরথের চার পুত্র রাম, লক্ষ্মণ, ভরত ও শত্রুঘ্নকে তিনি শিক্ষা দিয়েছিলেন। গুরু বশিষ্ঠের সময়ে বিশ্বামিত্র, মহর্ষি বাল্মীকি, পরশুরাম এবং অষ্টবক্রও ছিলেন।
২. ভরদ্বাজ: গুরু বৃহস্পতি মহান ঋষি আঙ্গিরার পুত্র, যিনি দেবতাদের গুরু ছিলেন। মহান এই ঋষি ভরদ্বাজ ছিলেন গুরু বৃহস্পতির পুত্র। চরক ঋষি ভরদ্বাজকে 'অপরিমিত আয়ু'-র বলে অভিহিত করেছেন। ঋষি ভরদ্বাজ ছিলেন কাশিরাজ দিবোদাসের পুরোহিত। তিনি দিবোদাসের পুত্র প্রতর্দনের পুরোহিতও ছিলেন এবং তিনিই প্রতর্দনের পুত্র ক্ষত্রর যজ্ঞ করিয়েছিলেন। বনবাসের সময়, ভগবান শ্রী রাম তাঁর আশ্রমে গিয়েছিলেন, যা ঐতিহাসিক দৃষ্টিতে ত্রেতা-দ্বাপরের সন্ধিক্ষণ ছিল। উল্লেখিত প্রমাণগুলি থেকেই ভারদ্বাজকে অসীম ও অপরিমিত আয়ুর বলা হয়। তাঁর আশ্রম ছিল প্রয়াগরাজে।
৩. বেদ ব্যাস: মহাভারতের যুগে বেদ ব্যাস ছিলেন একজন মহান গুরু এবং শিক্ষক। শ্রীকৃষ্ণ ছাড়াও তাঁর আরও চারজন শিষ্য ছিলেন। মুনি পায়েল, বৈশম্পায়ন, জৈমিনি এবং সুমন্তু। তাঁর সময়ে ঋষি গর্গ, দ্রোণাচার্য, কৃপাচার্যের মতো মহান ঋষিরাও ছিলেন। এই যুগে সন্দিপতিও ছিল। মহান ঋষি সন্দিপতি শ্রীকৃষ্ণকে ৬৪ টি শিল্পকলার শিক্ষা দিয়েছিলেন।
৪. ঋষি শৌনক: মহাভারত অনুসারে, ঋষি শৌনকই রাজা জন্মেজয়ের জন্য অশ্বমেধ এবং সর্পসত্র নামক যজ্ঞ করিয়েছিলেন। ঋষি শৌনক অনন্য সম্মান অর্জন করেন দশ হাজার শিক্ষার্থীর একটি গুরুকুল পরিচালনা করে এবং প্রথমবারের মতো কোন ঋষি এই ধরনের সম্মান অর্জন করেছিলেন। তিনি ছিলেন বিশ্বের প্রথম উপাচার্য।
৫. শুক্রাচার্য: ভৃগুবংশী দৈত্য গুরু শুক্রাচার্যের আসল নাম শুক্র উশষান। গুরু শুক্রাচার্যকে ভগবান শিব মৃত সঞ্জীবনী দিয়েছিলেন, যাতে মৃত অসুরদের পুনরায় প্রাণ ফিরিয়ে দিতে পারেন তিনি। গুরু শুক্রাচার্য অসুরদের সঙ্গে সঙ্গে দেবতাদের পুত্রদেরও শিক্ষা দিয়েছিলেন। দেবগুরু বৃহস্পতির পুত্র কচ ছিলেন তাঁর শিষ্য।
৬. দেবগুরু বৃহস্পতি: মহান ঋষি অঙ্গিরার পুত্র বৃহস্পতিকে দেবতাদের গুরু বলা হয়। দেবগুরু বৃহস্পতি রক্ষোঘরা মন্ত্র ব্যবহার করে দেবতাদের লালন -পালন ও রক্ষা করেন এবং দেবতাদের অসুরদের হাত থেকে রক্ষা করেন। যোদ্ধারা যুদ্ধে বিজয়ের জন্য তার কাছে প্রার্থনা করেন।
৭. ধৌম্য ঋষি: গুরু ধৌম্যের আশ্রম সেবা, তিতিক্ষা এবং সংযমের জন্য বিখ্যাত ছিল। তিনি তাঁর শিষ্যদের তপস্যা ও যোগে নিয়োজিত করতেন তাদের সক্ষম করতে। স্বয়ং গুরু মহর্ষি ধৌম্যের তপস্যা শক্তির আশীর্বাদই তাঁর শিষ্যদের পণ্ডিত করতে সক্ষম ছিল। অরুণি, উপমান্যু এবং বেদ (উত্তঙ্কা) - এই তিনজন পণ্ডিত ছিলেন ঋষি মহর্ষি ধৌম্যের শিষ্য।
৮. কপিল মুনি: কপিল মুনি 'সাংখ্য দর্শনের' প্রবর্তক ছিলেন। তাঁর মায়ের নাম দেবহুতি এবং পিতার নাম কর্দম। কপিল মাকে যে জ্ঞান দিয়েছিলেন, সেটাই 'সাংখ্যদর্শন' নামে পরিচিত। মহাভারতে তাঁকে বলা হয়েছে সাংখ্য বক্তা। কপিলবস্তু, যেখানে বুদ্ধের জন্ম হয়েছিল, কপিলের নামে প্রতিষ্ঠিত একটি শহর ছিল।
৯. বামদেব: বামদেব এই দেশকে সমাগান (অর্থাৎ সঙ্গীত) দিয়েছিলেন। বামদেবকে ঋগ্বেদের চতুর্থ মণ্ডলের সূত্রদার, ঋষি গৌতমের পুত্র এবং জন্মত্রয়ীর তত্ত্ববেন্তক হিসেবে বিবেচনা করা হয়। ভরত মুনি রচিত ভারতনাট্যম ধর্মগ্রন্থ সামবেদ থেকে অনুপ্রাণিত। হাজার বছর আগে লেখা সামবেদ থেকে, সঙ্গীত এবং বাদ্যযন্ত্র সম্পর্কে সম্পূর্ণ তথ্য পাওয়া যায়।
১০. আদি শঙ্করাচার্য: আদি শঙ্করাচার্যের জন্ম ৫০৮ খ্রিস্টপূর্বাব্দে। শঙ্করাচার্যের চারজন শিষ্য; পদ্মপাদ (সানন্দনা), হস্তমলক, মণ্ডন মিশ্র ও তোটক (তোতাকাচার্য)। মান্যতা রয়েছে যে, এই শিষ্যরা চারটি বর্ণের ছিলেন।
এছাড়াও চৈয়ন ঋষি, গৌতম ঋষি, কণ্ব, অত্রি, গার্গী, যজ্ঞব্যল্যক, মৈত্রেয়ী, চাণক্য, পতঞ্জলি, পানিনি এমন শত শত শিক্ষক রয়েছেন, যারা তাদের সময়কালে আমাদের দেশের দশা ও দীশা- দুইই পরিবর্তন করেছিলেন।
No comments:
Post a Comment