আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলের হামিদ কারজাই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর তালেবানের নিয়ন্ত্রণে নেয়ার পর নতুন করে ফ্লাইট চলাচল শুরু হয়েছে। বুধবার কাতার এয়ারওয়েজের একটি ফ্লাইট প্রথম এই বিমানবন্দরে অবতরণ করে।
এর আগে আফগানিস্তানের স্থানীয় সময় সোমবার রাতে দেশটি থেকে মার্কিন নেতৃত্বের বহুজাতিক সৈন্য সম্পূর্ণভাবে প্রত্যাহার করা হয়।
সৈন্য প্রত্যাহার শেষ হওয়ার পরপরই বিমানবন্দরের নিয়ন্ত্রণ নেয় তালেবান।
কাতার এয়ারওয়েজের ফ্লাইটে বিমানবন্দর পরিচালনায় টেকনিক্যাল বিষয়ে দক্ষ একটি দল কাবুলে এসেছে। দলটির এক সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, তারা আফগানিস্তানের রাষ্ট্রীয় আরিয়ানা আফগান এয়ারলাইনস ও কাবুলের বিমানবন্দর পরিচালনায় টেকনিক্যাল বিষয়ে সহায়তা করবেন।
তিনি বলেন, আফগানিস্তানের নতুন তালেবান প্রশাসনের অনুরোধে দলটি কাবুলে এসেছে।
তিনি আরো বলেন, বিমানবন্দর পরিচালনা ও নিরাপত্তা প্রদানের বিষয়ে তালেবানের সাথে এখনো আলোচনা চলছে।
এর আগে মঙ্গলবার তুর্কি রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা আনাদোলু এজেন্সির কাছে এক তালেবান নেতা ও আরিয়ানা আফগান এয়ারলাইনসের কর্মকর্তারা জানান, মার্কিন বাহিনী সৈন্য প্রত্যাহার কালে ফেলে যাওয়া সামরিক বিমান ও হেলিকপ্টারসহ বিমানবন্দরে থাকা বেসামরিক বিমান, বিমানবন্দরের টার্মিনাল ও রাডার ব্যবস্থা ধ্বংস করে গেছে।
আরিয়ানা আফগান এয়ারলাইনসের কর্মকর্তা আহমদ সাইয়ার রাহাত জানিয়েছিলেন, বিমানগুলোকে আবার উড্ডয়ন উপযোগী করতে অন্তত এক কোটি ডলার ও এক মাস সময় লাগবে।
২০০১ সালে যুক্তরাষ্ট্রে নাইন-ইলেভেনের সন্ত্রাসী হামলার জেরে আফগানিস্তানে মার্কিন নেতৃত্বে বহুজাতিক বাহিনী আগ্রাসন চালায়।
দীর্ঘ দুই দশক আফগানিস্তানে মার্কিন নেতৃত্বের বহুজাতিক বাহিনীর দখলের পর ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে কাতারের দোহায় এক দ্বিপাক্ষিক চুক্তিতে আফগানিস্তান থেকে মার্কিন বাহিনী প্রত্যাহার করতে সম্মত হয় যুক্তরাষ্ট্র। এর বিপরীতে আফগানিস্তানে শান্তি প্রতিষ্ঠায় অংশ নিতে তালেবান সম্মত হয়।
চলতি বছরের মে মাসে সম্পূর্ণ সৈন্য প্রত্যাহারের কথা থাকলেও মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এপ্রিলে এক ঘোষণায় ১১ সেপ্টেম্বরে নাইন-ইলেভেনের ২০তম বার্ষিকীতে সৈন্য প্রত্যাহার শেষ করার কথা জানান। পরে জুলাই সময়সীমা আরো কমিয়ে এনে ৩১ আগস্টের মধ্যে আফগানিস্তান থেকে সব মার্কিন সৈন্য প্রত্যাহারের ঘোষণা দেন তিনি।
প্রেসিডেন্ট বাইডেনের ঘোষণা অনুযায়ী নির্দিষ্ট সময়ের আগেই সোমবার রাতে আফগানিস্তান ছাড়ে মার্কিন বাহিনী।
মার্কিনিদের সাথে চুক্তি অনুসারে ক্ষমতাসীন থাকা মার্কিন সমর্থনপুষ্ট আফগান সরকারের সমঝোতার জন্য তালেবান চেষ্টা করলেও দুই পক্ষের মধ্যে কোনো সমঝোতা হয়নি। তালেবানের অভিযোগ, আশরাফ গনির নেতৃত্বাধীন আফগান সরকার দেশে শান্তি প্রতিষ্ঠায় তাদের আহ্বানে সাড়া দেয়নি।
এর পরিপ্রেক্ষিতে মে মাসে বহুজাতিক বাহিনীর প্রত্যাহারের মধ্যেই পুরো দেশের নিয়ন্ত্রণে অভিযান চালানো শুরু করে তালেবান।
৬ আগস্ট প্রথম প্রাদেশিক রাজধানী হিসেবে দক্ষিণাঞ্চলীয় নিমরোজ প্রদেশের রাজধানী যারানজ দখল করে তারা। যারানজ নিয়ন্ত্রণে নেয়ার ১০ দিনের মাথায় কেন্দ্রীয় রাজধানী কাবুলে পৌঁছে যায় তালেবান যোদ্ধারা। ক্ষমতাচ্যুৎ হওয়ার প্রায় ২০ বছর পর ১৫ আগস্ট কাবুলের নিয়ন্ত্রণ নেয় তালেবান।
সূত্র : আনাদোলু এজেন্সি
No comments:
Post a Comment