অনুগামীদের নিয়ে বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দিতে চলেছেন মুকুল রায়।
মুকুল রায় তৃণমূলে ফিরতে চলেছেন বলে গুঞ্জন। বিজেপি ছাড়ার জন্য সব রকম পরিকল্পনা আটঘাট বেঁধেই করছেন বলে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যম জানিয়েছে ।
এমন পরিস্থিতিতে বিজেপির অন্দরেও চলছে অস্বস্তির ঝড় । প্রশ্ন উঠেছে তবে কি মুকুল রায় বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দেবে? যদি মুকুল রায় বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে যায় তাহলে তার সাথে চলে যেতে পারে একাধিক বিজেপি বিধায়ক ও সাংসদ। সে ক্ষেত্রে বিজেপি বিধায়ক সংখ্যা কমে যেতে পারে। মুকুল রায়কে দিয়ে বিজেপি বিধানসভা ভোটের আগে তৃণমূল ভাঙার যে খেলা খেলেছিল এবার মুকুল রায়কে দিয়ে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে বিজেপি ভাঙ্গার ছক তৈরি করছে তৃণমূল নেতৃত্ব। এমন ইঙ্গিত দিয়েছেন তৃণমূল সাংসদ সৌগত রায়।
যদিও মুকুল রায় সহ যেসমস্ত তৃণমূলের নেতারা তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে গিয়েছিল তাদেরও ফেরার বিষয় নিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কোন সম্মতি দেননি। তবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সম্মতি না দিলেও অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় মুকুল রায় সহ একাধিক নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলেছেন ।
সৌগত রায় এনডিটিভিতে এক সাক্ষাৎকারে চাঞ্চল্যকর বেশ কিছু দাবি করেছেন । যা ঘিরে তৈরি হয়েছে নতুন সমীকরণ । সৌগত রায়ের মন্তব্যে বিজেপি ভাঙ্গা স্রেফ সময়ের অপেক্ষা এমন ইঙ্গিত মিলেছে। অন্যদিকে মুকুল রায় তার বাড়িতে দফায় দফায় বৈঠক করছেন বলে জানা গেছে।
মুকুল ঘনিষ্টেদের সূত্রে পাওয়া খবর, বিজেপিতে গিয়ে তিনি তেমন স্বস্তিতে নেই। বিজেপির টিকিটে জিতে বিধায়ক হলেও তিনি নাকি কিছুটা হলেও দূরত্ব বজায় রেখে চলছেন গেরুয়া শিবিরের থেকে। আর সেই জল্পনার আগুনেই ঘি ঢাললেন তৃণমূলের সাংসদ সৌগত রায়। সর্বভারতীয় সংবাদ মাধ্যম এনডিটিভি-কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তৃণমূল সাংসদ আকারে ইঙ্গিতে বুঝিয়ে দিলেন মুকুলের দলে ফেরা নিয়ে কথাবার্তা চলছে। তবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন দলনেত্রী তথা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
এনডিটিভিকে বুধবার সন্ধ্যায় সৌগত রায় বলেছেন, 'এমন অনেকেই আছেন প্রয়োজনের সময় তাঁরা দলের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করলেও এখন দলে ফিরে আসতে চাইছেন, তাঁদের সঙ্গে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় যোগাযোগ রেখে চলেছেন।' পাশাপাশি তিনি আরও জানিয়েছেন এই বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সৌগত রায় আরও বলেছেন, তিনি মনে করেন প্রত্যাবর্তনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য দুটি বিষয়কে বিবেচনা করা প্রয়োজন। একটি 'হার্ডলাইনার' অন্যটি 'সফট লাইনারা'।
হার্ডলাইনার আর সফটলাইনা-এর ব্যাখ্যাও দিয়েছেন সৌগত রায়। সফ্টলাইনারের তালিকাভুক্ত হবেন তাঁরা, যাঁরা দলত্যাগের পরেও দলনেত্রী সম্পর্কে কোনও খারাপ কথা বলেননি। দলনেত্রীকে কোনও অপমান করেননি। কট্টরপন্থীরা প্রকাশ্যেই দলনেত্রীকে অপমান করেছেন। কথা প্রসঙ্গে সৌগত রায় শুভেন্দু অধিকারী আর মুকুল রায়ের তথাও উত্থাপন করেন। তিনি বলেন দল বদলের পর শুভেন্দু অধিকারী একাধিকবার দলনেত্রী সম্পর্কে বিরুপ মন্তব্য করেছিলেন। বদনাম করার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু মুকুল রায় দল ছাড়লেও দলনেত্রী সম্পর্কে কোনও খারাপ মন্তব্য করেননি। মুকুল রায় সম্পর্কে তৃণমূল কংগ্রেসের কোনও প্রথম সারির নেতা এজাতীয় মন্তব্য এই প্রথম করলেন। যা আরও জিয়ে রাখল তাঁর প্রত্যাবর্তন ইস্যুকে।
মুকুল রায়- তৃণমূল কংগ্রেসের প্রথম কোনও বড় নেতা, যিনি ২০১৭ সালে দল পরবর্তন করেছিলেন। তার হাত ধরেই একে একে তৃণমূল কংগ্রেসের একাধিক নেতা দল পরিবর্তন করে গেরুয়া শিবিরে নাম লিখিয়েছিলেন। গত বিধানসভা নির্বাচনের আগে পর্যন্ত তালিকা ক্রমশই দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হয়েছিল। কিন্তু ভোট পরবর্তী বাংলায় ক্রমশই প্রকাশ্যে এসেছে বিজেপি নেতৃত্বে অন্তর্দ্বন্দ্ব।
অন্যদিকে মুকুল রায়ের স্ত্রী অসুস্থ হয়ে কলকাতার একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি। তাঁকে দেখেতে গিয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভাইপো তথা তৃণমূল নেতা অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। সূত্রের খবর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও নাকি ব্যক্তিগত স্তরে মুকুলপত্নীর খোঁজখরব নিয়েছিলেন। তবে এখনও পর্যন্ত দল বদলের বিষয়ে নীরবতাই পালন করে এসেছেন মুকুল রায়। তবে তাঁর বাড়িতে নাকি প্রায়ই তাঁর অনুগামীরা আসা যাওয়া করছেন। দফায় দফায় হচ্ছে বৈঠক। দক্ষ সংগঠক হিসেবে গোটা বাংলায় মুকুল রায়ের প্রভাব রয়েছে। সূত্রের খবর জেলার অনুগামীদের সঙ্গেও নাকি তিনি কথাবার্তা বলছেন। এখন দেখার মুকুল রায় কবে বিজেপি দলে যোগ দেয়।
No comments:
Post a Comment