উত্তরবঙ্গ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে হলো ব্ল্যাক ফাঙ্গাস আক্রান্ত মহিলার অস্ত্রপচার। আক্রান্তের জটিল অস্ত্রপচারে প্রাথমিক ভাবে সফলতা লাভ মেডিকেল টিমের। অস্ত্রপচারের ছত্রাক সংক্রমন ছড়িয়ে পড়া চোখের মণি, চোয়ালের ওপরের অংশ ও মুখের ত্বক কেটে বাদ দিতে হলো চিকিৎসকদের। তড়িঘড়ি ২৪ ঘন্টার মধ্যে রুগীর শারীরিক স্তিতিকে গুরুত্ব দিয়ে রবিবার রিপোর্ট দিয়ে মাইক্রোবায়োলজি বিভাগ জানায় ওই রুগীর দেহে মিউকর মাইকোসিস বাসা বেঁধেছে।
বিগত শুক্রবার রাতে উপসর্গ নিয়ে উত্তরবঙ্গ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের ইএনটি বিভাগে ভর্তি হয় মহিলা। জানা গিয়েছে বেশ কিছুদিন আগে তিনি কোভিডে আক্রান্ত হন, এরপরই কোভিড সেরে ওঠার পর তার শরীরে ছত্রাকের উপসর্গ দেখা দেয়। অনিয়ন্ত্রিত উচ্চ ডায়াবেটিস রয়েছে রুগীর। রুগী মুখের ডান অংশে ছত্রাক সংক্রমনে ব্যাথা, ফুলে যাওয়া, জ্বর ও চোখের দৃষ্টিশক্তির অক্ষমতা নিয়ে ভর্তি হন মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে।
ভর্তির পর থেকেই রুগীর শারীরিক যাবতীয় উপসর্গ দেখে ছত্রাক সংক্রমনের দিকেই ইঙ্গিত করেন চিকিৎসকেরা। সে অনুযায়ী মেডিকেলের একাধিক বিভাগের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা যৌথ ভাবে টিম করে চিকিৎসা শুরু করে রুগীর। রবিবার রিপোর্ট হাতে মেলার পরই সোমবার সকালে ১০.৩০ নাগাদ ইএনটি বিভাগীয় প্রধান চিকিৎসক রাধে শ্যাম মাহাতো, এনেস্থেসিয়া বিভাগের প্রধান ডাঃ সুশান্ত সরকার, অপথালমোলজি বিভাগীয় প্রধান চক্ষু বিশেষজ্ঞ মালবিকা দেব বর্মাকে নিয়ে মেডিকেলের এই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের টিম ইএনটি বিভাগের ওটিতে জটিল অস্ত্রপচারটি করে। এদিন তিনঘন্টা চলে অস্ত্রপচার।
দুপর নাগাদ অস্ত্রপচারের প্রক্রিয়া সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে বলে জানান ইএনটি বিভাগীয় প্রধান ডাঃ রাধেশ্যাম মাহাতো ও ডিন সন্দীপ সেনগুপ্ত। ইএনটি বিভাগীয় প্রধান ডাঃ রাধেশ্যাম মাহাতো বলেন রুগীর একাধিক শারীরিক জটিলতা রয়েছে। তাই বেশ কিছুদিন পর্যন্ত সিসিইউতে পর্যবেক্ষণ রাখা হচ্ছে। এটা একটি জটিল অস্ত্রপচার। এক্ষেত্রে রুগী মহিলার ছত্রাক সংক্রমন ছড়িয়ে পড়া মুখের ডান অংশের চোখের মনি,চোয়াল ওপরের অংশ, মুখ বয়বের ওপরের ত্বক,কপালের অংশ সহ ডানদিকের সাইনাসের অংশও অস্ত্রোপচার করে কেটে বাদ দিতে হয়েছে।
ইএনটির বিভাগীয় প্রধান চিকিৎসক রাধে শ্যাম মাহাতো জানান রুগীর প্রাণ বাঁচানোর বিষয়টিকে মোক্ষম গুরুত্ব দিয়ে অস্ত্রপচারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এ ধরনের অস্ত্রপাচারে যেকোনো সময় রুগীর শারীরিক অবস্থার অবনতি হতে পারে সে বিষয়েগুলি দেখা হচ্ছে। তবে কিছুটা স্বস্তির বিষয় হলো রুগীর মস্তিষ্কে সংক্রমন বিস্তার করতে পারেনি তার আগেই অস্ত্রপচার করা সম্ভব হয়েছে। তিনি বলেন রুগী প্রাথমিকভাবে কিছুটা সুস্থ্য হলে পরবর্তীতে মুখের ত্বকের পুনর্গঠনের কাজ করা হবে।
অন্যদিকে উত্তরবঙ্গ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসকদের কৃতজ্ঞতা জানান রুগী পরিবার। শিলিগুড়ি প্রধাননগরের বাসিন্দা পরিবার জানায় উত্তরবঙ্গ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসকরা যেভাবে তৎপরতার সঙ্গে তাদের রুগীর চিকিৎসা ও অস্ত্রপচার করেছে তা সত্যি অভাবনীয়। ভর্তির দুদিনের মধ্যেই চিকিৎসা করে, রিপোর্ট তৈরি করে অস্ত্রপচার সম্পন্ন করেছেন তারা। পরিবার জানায় হোম আইসোলেশনেই মহিলা সেরে ওঠে কোভিড থেকে,এরপরই কিছুদিনের মধ্যে এই ধরনের উপসর্গ দেখা দেয়। উচ্চ ডায়াবেটিসের সমস্যা যে রয়েছে তা তাদের এতদিন জানতেন না।
No comments:
Post a Comment