চরম অমানবিক। স্ত্রীর সামনেই কার্যত ধড়ফড় করতে করতে মৃত্যু হলো স্বামীর, শত কাকুতি-মিনতি করেও হাইপার অক্সিজেন চালুই করল না নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষ বলেই চাঞ্চল্যকর অভিযোগ। ঘটনায় ব্যাপক উত্তেজনা ছড়িয়েছে মুর্শিদাবাদের সদর শহর বহরমপুরে। শেষ পাওয়া খবরে জানা যায় শেষ পর্যন্ত মর্মান্তিক এই কাণ্ডে রোগীর পরিবারের অভিযোগের ভিত্তিতে বহরমপুর পুলিশের পক্ষ থেকে পদক্ষেপ নিয়ে জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক এর কাছে একটি মেডিকেল টিম তৈরি করে ঘটনার তদন্তের সুপারিশ করা হয়েছে। সেইমতো রবিবার মুর্শিদাবাদ জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক প্রশান্ত বিশ্বাস জানান,"পুরো বিষয়টি আমাদের নজরে এসেছে।আগামীকাল সোমবার মেডিকেল বোর্ড গঠন করে অভিযোগের ভিত্তিতে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়ার কাজ শুরু হবে।
বাকিটা তদন্ত সাপেক্ষ"।কার্যত সেই তদন্তের দিকেই চেয়ে রয়েছে মৃত ওই মাঝবয়সী ব্যক্তি অভিজিৎ রায়ের স্ত্রী ও পরিবারের সদস্যরা। জানা যায়, কয়েকদিন ধরেই লাংস এর সমস্যা সহ সুগারের সমস্যায় ভুগছিলেন কান্দি মহকুমার বাসিন্দা অভিজিত বাবু। প্রথমে তাকে কান্দি মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে করোণা পরীক্ষায় তিনি নেগেটিভ হন। পরবর্তীতে উন্নত চিকিৎসার জন্য মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয় অভিজিত বাবু কে। সেখানে তার অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় হাইপার অক্সিজেনের প্রয়োজন হয়ে পড়ে অভিজিত বাবুর বলেই তার পরিবারের সদস্যরা জানান। এর পরেই পরিবারের লোকজন তড়িঘড়ি তাকে বহরমপুরের মুর্শিদাবাদ নার্সিংহোম ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার নামের বেসরকারি চিকিৎসা কেন্দ্রে নিয়ে আসেন। তারপরেই এক চরম মর্মান্তিক ঘটনার সাক্ষী হতে হয় অভিজিত বাবুর গোটা পরিবারকে।
অভিযোগ, কার্যত কোনরকম চিকিৎসা না করেই অভিজিৎ বাবুকে স্ট্রেচারের ওপর বাইরে ফেলে রেখে দেওয়া হয় ঘন্টাখানেক ধরে নানান অজুহাতে। তখনই অভিজিত বাবুর স্ত্রী ছোটন রায় বারংবার ওই নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষ কে হাই ফ্লো অক্সিজেন চালু করতে বলেন।কিন্তু নাছোড়বান্দা নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষ কোন ভাবেই সে কথায় কর্ণপাত করেনি বলেই অভিযোগ। এমনকি শেষ পর্যন্ত অভিজিত বাবুর স্ত্রী হাসপাতালে ম্যানেজারের হাতে-পায়ে পর্যন্ত ধরেন তার স্বামীকে বাঁচানোর জন্য দ্রুত চিকিৎসার পরিসেবা চালু করার ক্ষেত্রে। কিন্তু তাতেও কোনো কাজ হয়নি।
এইভাবে ক্রমশ সময় এগিয়ে যেতে থাকে বিনা চিকিৎসায় নার্সিংহোমের বাইরে পড়ে থাকেন অভিজিত বাবু। অবশেষে কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই তার মৃত্যু হয় সেখানে। পরেই ক্ষোভে ফেটে পড়েন অভিজিত বাবুর পরিবারের সদস্যরা ওই নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে। অভিযুক্ত নার্সিংহোমের কর্তাদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে সরব হন তিনি। এতেই পরিস্থিতি ক্রমশ উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। পরিস্থিতি হাতের বাইরে বেরিয়ে যেতে দেখে নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষ পুলিশকে ডাকে ঘটনাস্থলে। এরপরে বিশাল পুলিশবাহিনী ছুটে আসে সেখানে। এরই মধ্যে সুযোগ বুঝে গা-ঢাকা দেয় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। যদিও তারা সংবাদমাধ্যমের সামনে মুখ খুলতে চাননি। পাল্টা পুরো ঘটনার জন্য তারা অভিজিত বাবুর পরিবারকেই দায়ী করেন আশ্চর্যজনকভাবে।
No comments:
Post a Comment